ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হলেন দুই প্রধান শিক্ষক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ১৩ নভেম্বর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

হালুয়াঘাটে দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক।

৫নং গাজিরভিটা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ও ৯নং ধারা ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন ধারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহমদ বিপ্লব। 

দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় খুশি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও শিক্ষক সমাজ। 

গাজিরভিটা ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন আবদুল মান্নান। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পাশাপাশি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে। গাজিরভিটা ইউনিয়নে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এলাকায় সম্মানী ব্যক্তি হিসেবেও বেশ সুনাম রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার সাধারণ ভোটারদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবদুল মান্নানের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চার বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। গতবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে জয়ী হলেও জনগণের স্বপ্ন পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয় কথায় কথায় মানুষকে গালিগালাজ ও সম্মানহানী করতেন তিনি। 

সর্বশেষ এ বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৭০ বছরের বৃদ্ধকে তার গাড়িতে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তার বিচারের দাবিতে উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তার প্রতি বিরক্ত ছিলেন। 

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলেন, ইউনিয়নে তিনি যতবারই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ততবারই ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের সুনাম নষ্ট করেছেন। এসব কারণেই এবারের নির্বাচনে একজন শিক্ষক ও ভালো মানুষকে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। জনগণও ব্যালটের মাধ্যমে তাদের যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, শিক্ষক আবদুল মান্নান জনগণের পাশে থেকে দলের সুনাম রক্ষার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করবেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিজয়ী নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, আমি একজন শিক্ষক মানুষ। মানুষকে সারা জীবন সম্মান দিয়ে এসেছি। মানুষের সুখে দুঃখে তাদের পাশে থেকেছি। প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের জাতীয় সংসদ সদস্য মিষ্টার জুয়েল আরেং সহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। উনারা আমাকে মনোনয়ন দিয়ে পাঠিয়েছেন এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য। গাজিরভিটা ইউনিয়নের মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে তা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমি আমার সবটুকু উজার করে আমার ইউনিয়নের জনগণের জন্য কাজ করে যাব। আমার এলাকার মানুষ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর ইউনিয়ন গড়বো। আমার ইউনিয়ন হবে হালুয়াঘাটের মধ্যে একটি মডেল আধুনিক ইউনিয়ন। 

অন্যদিকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ধারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন ধারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহমেদ বিপ্লব। ধারা ইউনিয়ন পরিষদের ইতিহাসে টানা দুইবারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। একজন সাদামাটা মনের মানুষ হিসেবে এলাকায় তিনি পরিচিত। ছাত্রজীবন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি’র আমলে হামলা মামলার শিকার হয়েছিলেন। ব্যক্তি জীবনে বেছে নেন শিক্ষকতার পেশা। কে কে উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। 

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ধারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার আমলে গত পাঁচ বছরে ধারা ইউনিয়নে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়। পৌরসভার আদলে তিনি ধারা বাজারে লাইটিং এর ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া রাস্তাঘাট পাঁকা ও নতুন রাস্তা নির্মাণ, ধারা উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবণ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে তার আমলে। ফলে এবারো মানুষ নৌকাতেই ভরসা রেখেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিজয়ী চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ বিপ্লব বলেন, আমার ওপর মানুষের যে আস্থা বিশ্বাস, আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও সেটা রাখব। আমার গত পাঁচ বছরে কেউ বলতে পারবে না আমি কোনো বয়স্ক, বিধবা ও শিশু কার্ড দিয়ে কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আমি সবসময় সৎ উপার্জনে চলি। আমার গত পাঁচ বছরে অনেক রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। আমি অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলো দ্রুত করার চেষ্টা করব। আমার ‌ওপর আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের জাতীয় সংসদ সদস্য মিষ্টার জুয়েল আরেং। আমি উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার ইউনিয়নের জনগণের প্রতি। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়