ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

ময়মনসিংহের ভালুকায় সৌদি খেজুরের আবাদ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ৩০ অক্টোবর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি খেজুর চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের আব্দুল মোতালেব। মরুভূমির ধুধু বালি পাথরের তপ্ত ভূমি নয় সবুজ শ্যামল ষঢ় হৃতুর নরম মাটিতে সৌদি খেজুরের আবাদ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের সৌদি ফেরৎ যুবক আঃ মোতালেব।

অর্থকরি ফসল হিসেবে সৌদি খেজুর চাষ বাংলাদেশের কৃষিতেও বিপ্লব আনতে পারে প্রমান করেছেন এলাকায় খেজুর মোতালেব নামে পরিচিত আঃ মোতালেব।

তার বাড়ী সংলগ্ন মাত্র ৭০ শতাংশ জমিতে ২০০১ সালে সৌদি খেজুরের বীজ বপনের মাধ্যমে সম্পুর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে সৌদি খেজুর চাষ শুরু করেন । কয়েক বছরের ব্যবধানে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে এজন্য তাকে রাতদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয়েছে।

পাড়াগাঁও গ্রামে মোতালেবের গড়েতোলা মোফাজ্জল-মিজান সৌদিয়া খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায় সারি সারি ছোট বড় খেজুর গাছে ঝুলে রয়েছে নয়ন জুরানো মনলোভা কাঁচা পাকা খেজুরের কাঁদি। বাগানে একটি গাছে লাল রং ধারন করে রয়েছে বড় লম্বা আকৃতির খেজুর নাম আজুয়া। ছোট বড় অনেক গাছে এ জাতের খেজুর ধরেছে। আরেকটি গাছে তার চেয়েও বড় আকৃতির খেজুর নাম আমবাগ। আরও রয়েছে সুকারি ও বকরি জাতের খেজুুর। বকরি জাতের খেজুর শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য খুবই উপকারী বলে জানান তিনি। খেজুরের কাঁদিগুলো পলিথিনে ঢেকে রাখা হয়েছে কাক পক্ষীর হাত হতে বাঁচানোর জন্য। বয়স্ক উঁচু গাছে উঠার জন্য চারিদিকে লোহার এ্যাংগেল দিয়ে মাচা করে তাতে সিড়ি করেছেন সহজে গাছ থেকে খেজুর পারার জন্য। এটি তার নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরী। প্রতিটি মাচা তৈরী করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত।

আঃ মোতালেব জানান তিন বছর সৌদি আরবে থাকাকালীন সেখানকার একটি খেজুর বাগানে চাকরি করে খেজুর চাষে অভিজ্ঞতা অর্জণ করেন। ২০০০ সালে দেশে ফিরার সময় সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন জাতের সৌদি খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বাড়ী সংলগ্ন ৭০ শতাংশ জমিতে বীজ বপনের মাধ্যমে শুরু হয় সৌদি খেজুরের আবাদ। ২৭৫ টি গাছের মধ্যে তিন বছরের মাথায় দুটি গাছে প্রথম খেজুর আসে। বাগানের পরিচর্যা পানির ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরী করতে তার কয়েক লক্ষ টাকা ব্যায় হয়ে যায়। তিনি জানান দীর্ঘ ১৯ বছরে একটি পরিপুর্ণ বানিজ্যিক খেজুর বাগান করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে ১২শ’র মত স্ত্রী গাছ রয়েছে যার মধ্যে ১১৬ টি গাছে এ বছর ফলন আসে। প্রতি কেজি পাঁকা খেজুর ১৫০০ টাকা ও শুকনা প্রতি কেজি ৩০০০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে থাকেন।

এ বছর ১১৬ টি গাছ থেকে প্রায় দুই টন খেজুর ৭ লাখ টাকার মত বিক্রি করেছেন আরও বিক্রি হবে। সৌদি খেজুর চাষের কিছু পদ্ধতির কথা জানিয়ে বলেন, স্ত্রী গাছ না হলে ফলন আসেনা। স্ত্রী গাছের গোড়ায় কলা গাছের মত চারা গজায় যা কলম হিসাবে কেটে মাটিতে পুঁতে প্রায় দুই বছর পরিচর্যার পর রোপন উপযোগী করে তুলতে হয়। ওই সব চারা স্ত্রী গাছ হিসেবে ফল ধারক বলে গন্য হয়। একটি স্ত্রী গাছ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে বাগানটিতে সারে চার বিঘা জমি রয়েছে। সহায়ক ফসল হিসেবে তিনি আদা, কচু ও আলুর আবাদ করেও সফলতা পেয়েছেন।

খেজুরের চারা ও খেজুর বিক্রির টাকায় তিনি বাগানের উন্নয়ন সহ সংসারের নানা চাহিদা পুরনে সমর্থ হন। তিনি জানান ছোট আকৃতির প্রতিটি চারা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, ফলধারক একটি গাছ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। তার বাগানে উৎপাদিত খেজুর সৌদি খেজুরের চেয়েও মিষ্টি ও জাত ভেদে আকার আকৃতিতে বড় হওয়ায় চাহিদা অনেক। এক সময় স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে কোন রকমে বসবাস করতেন। খেজুর বাগান হতে আয়কৃত টাকায় তিনি দ্বিতল বিল্ডিং বাড়ী করেছেন, ৬ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য বর্তমানে কোটি টাকার উপরে। স্ত্রী মজিদা আক্তার বাগানে আগাছা পরিষ্কার হতে গাছের গোড়ায় পানি দেয়া সহ সার্বিক সহযোগিতা করে স্বামীর সাথে দিন রাত পরিশ্রম করে খেজুর বাগানটি গড়ে তুলেছেন। বড় ছেলে মোফাজ্জল শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজে অর্থনীতি নিয়ে অনার্স পরছে। ছোট ছেলে মিজান রাজেন্দ্রপুর কেন্টনমেন্ট স্কুলে ১০ম শ্রেণীতে লেখা-পড়া করছে। মেয়ে মর্জিনার বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে এখন সুখ সাচ্ছন্দে ভরপুর। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে সম্পুর্ণ নতুন ও নিজস্ব প্রযুক্তিতে সৌদি খেজুরের সফল উৎপাদনে গত বছর গাজীপুর খামারবাড়ী হতে তার বাগানটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়