ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কাদাকনাথে স্বপ্ন বুনছেন ভৈরবের খামারিরা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২১, ২৫ নভেম্বর ২০২০  

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কবির মিয়ার কাদাকনাথ জাতের মুরগির খামার।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কবির মিয়ার কাদাকনাথ জাতের মুরগির খামার।

মধ্যভারতের ওষধি ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন মুরগি কাদাকনাথে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের খামারিরা। এরই মধ্যে অনেকের স্বপ্ন সফলতায় রূপ নিয়েছে। তেমনই একজন শহরের চণ্ডীবের এলাকার খামারি কবির মিয়া। তিনি এখন কাদাকনাথ মুরগির সফল খামারি হিসেবে নতুনদের কাছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণা। তিনি সহযোগিতার উদার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার নতুন উদ্যোক্তাদের দিকে।

কাদাকনাথ মুরগি দেখতে কালো। এর মাংসও কালো। ডিম দেশি মুরগির মতোই দেখতে সাদা। তবে এর মাংস, ডিম বেশ সুস্বাদু। আর পুষ্টি দেশি জাতের মুরগির চেয়ে বেশি। অন্যদিকে এই মুরগির মাংস এবং ডিম ওষধি গুণসম্পন্ন। এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট খামারিরা।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানায়, কাদাকনাথ মুরগির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এ জাতের মুরগির খাবার খরচ খুবই কম। কেনা খাবারের পাশাপাশি এদের খাদ্য তালিকার অন্যতম হলো সবুজ ঘাস ও লতাপাতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য জাতের মুরগির চেয়ে বহুগুণে বেশি। পালন করা যায় দেশি মুরগির মতোই।

এদের জন্য লেয়ার বা ব্রয়লার মুরগির মতো আলাদাভাবে ঘর বা শেড তৈরি করতে হয় না। বৃষ্টি থেকে রক্ষায় মাথার ওপরে কিছু একটা থাকলেই হলো। ফলে এই মুরগির খামার করতে খরচ হয় খুবই কম।

খামারি কবির মিয়া জানান, তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে পোলট্রি খামারের সঙ্গে জড়িত। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি জাতের মুরগির খামার করেছেন। এখনো রয়েছে। তবে কাদাকনাথের মতো সাফল্য তিনি আর কোনো জাতের মুরগিতে পাননি।

কবির মিয়া জানান, ২০১৭ সালে প্রথম তিনি কাদাকনাথ মুরগির বিষয়ে জানতে পারেন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্য অনুষ্ঠান থেকে। সেই বছরই তিনি স্বল্প পরিসরে এই মুরগির খামার গড়ে তোলেন। যা বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি মুরগির খামারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর খামারে উৎপাদিত ডিম, বাচ্চা ও মুরগি বিক্রি করছেন।

কবির মিয়া আরো জানান, তাঁর এই ভিন্ন জাতের মুরগির খামার দেখতে আশপাশের লোকজন প্রতিদিনই ভিড় করে। আর দেখতে আসা অনেকেই কম করে হলেও মুরগি কিনে নিজেরা খামার গড়ে তুলছেন। সেইসঙ্গে তিনি তাদের নানাভাবে পরামর্শসহ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

কাদাকনাথ মুরগির খামারে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার এবং লাখ টাকা বিনিয়োগে মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো মুনাফা করা যাবে বলে জানান খামারি কবির মিয়া। তাঁর অভিমত, এ শিল্পে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রসার আরো ব্যাপকভাবে বাড়ালে কম দামে এই পুষ্টিকর মাংসের মুরগিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

এদিকে, স্থানীয়রা জানায়, তারা এখন কবির মিয়ার খামার থেকে নিয়মিত ডিম আর মুরগি কিনে নিচ্ছেন খাবারের জন্য। এই মুরগির মাংস ও ডিম সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় চাহিদাও বাড়ছে।

অপরদিকে, নতুন উদ্যোক্তারা জানায়, তারা কবির মিয়ার খামারের সফলতা দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজেরাই খামার গড়ে তুলছে। অনেকেই সফলও হয়েছে।

ভৈরবে বেশ কিছু নতুন উদ্যোক্তা কাদাকনাথ মুরগি লালন পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছে জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে কাদাকনাথ মুরগির খামারগুলো পরিদর্শন করেছি। দেশি জাতের মুরগির মতোই এই মুরগিও দেশের আবহাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী। এ ছাড়া দেশের যেকোনো জাতের মুরগি থেকে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। খরচও কম। তবে পুষ্টি ও ভিটামিন বেশি। আমরা কাদাকনাথ মুরগির খামারিদের টেকনিক্যাল সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহায়তা করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়