থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ ৫ চুক্তি সই
নিউজ ডেস্ক
থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ ৫ চুক্তি সই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফরের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে পাঁচটি দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে তাঁর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়। বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কের পাশাপাশি হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ নিতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আলোচনা করেছি বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণের প্রস্তাবও দিয়েছি। এর আগে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন অভ্যর্থনা জানান এবং এরপর সেখানে থাই কুহ ফাহ ভবনের সামনের উন্মুক্ত স্থানে তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানানো হয়। থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকশ দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইতে স্বাক্ষর করেন।
নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে নিহিত। আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আওতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই নেতা শক্তিশালী দ্বিমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজীকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোয় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। দুই পক্ষ ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা এ বিষয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন (এলওআই)।
দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে সহজ যোগাযোগের সুবিধার্থে ঢাকা এবং ব্যাংকক অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা ছাড় সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য একটি চুক্তি রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য থাইল্যান্ড জ্বালানি সহযোগিতায় নিয়োজিত একটি সম্ভাব্য অংশীদার। জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে শক্তি সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এখানে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় নথি।
শুল্কসংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তার বিষয়ে তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, থাই জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সেরা পর্যটন অনুশীলন থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আমরা পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। তিনি বলেন, জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই পক্ষ কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছে। সামুদ্রিক যোগাযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রণং বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি শিপিং লাইন নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। দুই প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বিমসটেক মোট ১.৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে সেথ্রা থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পরে গভর্নমেন্ট হাউসে আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন তিনি।
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ণ ফ্রা ভাজিরা ক্লাওচা উয়ুয়া এবং রানি সুথিদা বজ্রসুধা বিমলালক্ষ্মণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডুসিট প্রাসাদের অ্যামফোর্ন সাথার্ন থ্রোন হলে রাজা এবং রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা কুশল বিনিময় এবং দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদের কাজ করতে হবে। গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এ দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে বুধবার ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ডে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ এপ্রিল তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
- ৭ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিলো সেনাবাহিনী
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ
- পর্যটন বিকাশে চালু হচ্ছে হোম স্টে সার্ভিস
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যে কারণে কৃতজ্ঞ সেনাবাহিনী
- করোনা চিকিৎসায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা
- আরো ২৪ ট্রেন চালু হচ্ছে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে
- অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়লো সাময়িক এনআইডির মেয়াদ
- প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদযাপন হবে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস
- করোনা নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ৪ চীনা বিশেষজ্ঞ