ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতসহ চার ধানে নতুন সম্ভাবনা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ৮ মে ২০২৪  

বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতসহ চার ধানে নতুন সম্ভাবনা

বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতসহ চার ধানে নতুন সম্ভাবনা

বংশপরম্পরায় স্থানীয় জাতের ধান চাষে লাভের মুখ দেখা যেন অমবস্যার চাঁদ। অতিরিক্ত সার-যত্ন দিয়ে ফসল ফলিয়ে খরচ উঠলেও কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত লাভ পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কৃষকদের আর্থিক লাভ ও খাদ্য নির্ভরতার লক্ষ্যে ৪টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। 
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার গন্ডগোহালী গ্রামের কৃষকরা এই ধান চাষ করে চাহিদার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছেন। এতে কৃষকদের আর্থিক লাভের পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও ভরপুর এই জাতের ধান বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও জুগিয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতগুলো হলো বঙ্গবন্ধু-১০০, ব্রি ধান-১০২, ব্রি ধান-১০৪ ও ব্রি ধান-১০৫। এর মধ্যে ব্রি ধান-১০৫ এই জাতের ধানের চালকে বলা হয় ডায়াবেটিক চাল। কারণ ডায়াবেটিক রোগীরা এই চালের ভাত ইচ্ছেমতো খেতে পারবেন বলে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন। 

চলতি বোরো মৌসুমে পুঠিয়ার গ-গোহালী গ্রামে পার্টনার প্রকল্পের অর্থায়নে ও রাজশাহী ব্রি’র তত্ত্বাবধানে ৬৬ কৃষকের প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে উদ্ভাবিত ৪টি জাতের ধান লাগানো হয়। রাজশাহী ব্রি জানায়, স্থানীয় জাতের তুলনায় এই ৪ জাতের বীজে বিঘায় ৫-৬ মণ ধান বেশি উৎপাদিত হওয়ায় অন্য কৃষকরাও এই ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার বিকেলে ব্রি’র রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের আয়োজনে স্থানীয় চার শতাধিক কৃষককে নিয়ে প্রদর্শনীর ধান কর্তন ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহীকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলায় পরিণত করতে উচ্চফলনশীল জাত চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণে কৃষকদের নিয়ে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 
এতে উপস্থিত ছিলেন ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান, ব্রি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল কাদের ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী ব্রি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ফজলুল ইসলাম। 
অনুষ্ঠানে ব্রি’র মহাপরিচালক জানান, জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-১০০ ও ব্রি ধান-১০২ উচ্চফলনশীল জাত। ব্রি ধান-১০৪ সুগন্ধি হওয়ায় তাতে যেমন স্থানীয় জাতের চেয়ে বেশি বাজার মূল্য পাবেন কৃষকরা তেমনি পোলাও ও বিরিয়ানির চাল হিসেবে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। এ ছাড়া ব্রি ধান-১০৫ ডায়াবেটিক চাল হিসেবে চাষাবাদ করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবানও হতে পারবেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক নারী ও শিশুর শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি দূর করবে ‘উৎকৃষ্ট জিঙ্ক সমৃদ্ধ’ ধান ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ জাতের ধান। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭ টন। তবে অনুকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে, যা সন্তোষজনক।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গড়ে দেশের প্রায় অর্ধেক নারী ও শিশু জিঙ্কের অভাবজনিত নানা রোগে ভুগে থাকে। সাধারণত জিঙ্কের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই অবস্থার মধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) বিজ্ঞানীরা ধানের এই জাত উদ্ভাবন করেন।এই ধান এবার রাজশাহীর পুঠিয়ায় চাষাবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা।কৃষকরা বলেন,  রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণের পরিমাণ কম হওয়ায় বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আগামীতে এ ধান চাষে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়