ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটে পাঁচ অগ্রাধিকার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৪  

৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটে পাঁচ অগ্রাধিকার

৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটে পাঁচ অগ্রাধিকার

প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় আগামী বাজেটের পাঁচটি অগ্রাধিকার ঠিক করেছে অর্থবিভাগ। এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার, বাজেট ঘাটতি কমানো ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে বাজেটে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা। অবশ্য বাজেটের সংস্কার আনা হবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুসারে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যানও করা হবে। যা বাজেটের আগেই আইএমএফের কাছে জমা দিতে হবে। এদিকে ২৪ এপ্রিল আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে এখনো তেমন কোনো কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য আসছে বাজেটে কাঠামোগত সংস্কার আনা হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজেটটি হবে কিছুটা সংকোচনমূলক। মূলত রাজস্ব আহরণ কম হওয়া, আমদানি ও রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া এবং বাজেট বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক না হওয়ায় আসছে বাজেটটিকে কিছুটা সংকোচনমুখী করা হবে। তবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে। এ জন্য রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আসছে বাজেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ানো হবে কম। যেখানে স্বাভাবিকভাবে প্রতি বছর বাজেট ১২-১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ বছর তা বাড়তে পারে ৫-৮ শতাংশ।

সবশেষ গত ৪ এপ্রিল ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট মনিটরিং, বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ বাজেটের মূল আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ওই বছর বাজেট বেড়েছিল ৮৩ হাজার কোটি টাকা।

ইতোমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকে সামনে রেখে ত্রিপক্ষীয় সভা ও প্রাক বাজেট আলোচনা শুরু করেছে অর্থবিভাগ এবং এনবিআর। এদিকে গত ১০ মার্চ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপর্ণ একটি সভা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সে সভায় দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা অংশ নেন। আসছে বাজেটের বরাদ্দ, বাজেট ও আর্থিক খাতের সংস্কার, অনিয়ম-দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিষয়ে তারা বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, এবারের বাজেট কিছুটা সংকোচনমুখী হবে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা হবে। বাড়ানো হবে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। জনগণের কাঁধে করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো হবে।

সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে চলতি বাজেটের চেয়ে আকার বাড়ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এদিকে সিপিডি বলেছে, অর্থবছর শেষে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ৮২ হাজার কোটি টাকায়। এই ঘাটতি কমিয়ে এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এদিকে চলতি বছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

জানা গেছে, টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের পথ দেখানোই প্রধান লক্ষ্য। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক নানা চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। তৈরি পোশাক খাতের ওপর আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবিধ নিষেধ এলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। এমনিতেই উচ্চ বৈদেশিক ঋণ, ডলার সংকট, ব্যালান্স অব পেমেন্টে নেতিবাচকতা, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতিহীনতায় দেশের অর্থনীতি থমকে আছে। ফলে নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেটটি খুবই কৌশলী হবে বলে জানিয়েছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা।

অর্থবিভাগ বলছে, আসছে বাজেটে কমিয়ে ধরা হবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির টার্গেট। ঘাটতির চাপ ও খাদ্যমূল্য কমানো অন্যতম লক্ষ্য। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও ডলারে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা ও আর্থিক খাতের সংস্কারেও জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের শর্তের প্রতিফলন ঘটবে এবারের বাজেটেও। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্থবিরতা কাটিয়ে অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর পরিকল্পনাও থাকছে আগামী বাজেটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। বাড়াতে হবে জোগান, উৎপাদন। তদারকি বাড়াতে হবে নিত্যপণ্যের বাজারে। বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে অতিরিক্ত টাকা, ডলারের ঘাটতি মেটাতে বাড়ানো হবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হবে ধাপে ধাপে। এসব বিষয়কে আসছে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়