শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দেশ
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
৯৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুেসবার আওতায়, ৩ লাখ পরিবারে বাতি জ্বললে আলোয় উদ্ভাসিত হবে গোটা দেশ। শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দেশ। বিদ্যুেসবার মধ্যে এসেছে জাতীয় গ্রিডের আওতায় থাকা সব গ্রাম ও পরিবার। শুধু বাকি রয়েছে গ্রিড এলাকার বাইরে থাকা ৩ লাখ ৭ হাজার ২৪৬ পরিবার। এ পরিবারগুলোতে বৈদ্যুতিক আলো জ্বললে সব নাগরিককে বিদ্যুেসবার আওতায় আনার মাইলফলক অর্জিত হবে। আগামী মার্চের মধ্যে এ পরিবারগুলোতেও বিদ্যুত্ পৌঁছে যাবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পূর্তিতে দেশের সব নাগরিক পাবেন বিদ্যুত্। আলোয় উদ্ভাসিত হবে সারা বাংলাদেশ।
সব মানুষের ঘরে বিদ্যুত্—এমন অনুপ্রেরণা ও সংকল্প নিয়ে এখন কাজ করছেন বিদ্যুত্কর্মীরা। বিদ্যুত্ সংযোগ পরিস্থিতিও বদলে গেছে। আগে বিদ্যুত্ সংযোগের আবেদন করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হতো গ্রাহকদের। আর এখন মাইকিং করে খোঁজা হচ্ছে সম্ভাব্য গ্রাহককে। বিদ্যুিবহীন থাকা বা সংযোগ না পাওয়া পরিবারগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় বিদ্যুত্ অফিসে আবেদন করতে বলা হয়েছে। সংযোগ না পাওয়া পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেলে দ্রুততর সময়ে তাদের বিদ্যুেসবার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো পর্যবেক্ষণ বা পরামর্শ থাকলে তা যথাশিগগির জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করে সব সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়েছেন বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
বিদ্যুত্ বিভাগ এবং বিতরণ কোম্পানিগুলো সূত্র জানায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ৯৮ শতাংশ গ্রাম-পরিবার বিদ্যুত্ সংযোগ পেয়েছে। ৯৮ হাজার ৩১৯টি গ্রামের মধ্যে ৯৫ হাজার ২৪০টি গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতায়িত করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা-কোম্পানিগুলো। এখন বাকি রয়েছে ৩ হাজার ৭৯টি গ্রাম। এ সবগুলো গ্রামই পার্বত্য, দ্বীপ এবং চরাঞ্চলের। এগুলোতে গ্রিড বিদ্যুত্ সরাসরি পৌঁছানো যায়নি। তাই বিকল্প উপায়ে বিদ্যুত্ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদ্যুত্ বিভাগের নীতি-বিশ্লেষণী সংস্থা পাওয়ার সেলের তথ্যমতে, বিতরণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাম বাকি রয়েছে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। এ সংস্থার আওতাধীন ২ হাজার ৫২ গ্রামে বিদ্যুত্ পৌঁছেনি। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে সবচেয়ে বেশি মাইলফলক অর্জনকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় ১ হাজার ১৪টি গ্রাম বাকি রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুত্ সরবরাহে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতায় ৯টি গ্রাম এবং উত্তর অঞ্চলের কোম্পানি নেসকোর আওতায় ১৭টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন হয়নি। ঢাকায় বিদ্যুত্ বিতরণে দায়িত্বরত দুই সংস্থা—ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) আওতাধীন এলাকায় সব পরিবার বিদ্যুত্ সংযোগ পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। সে লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের দেওয়া চিঠিতে বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১৫ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ চেষ্টায় বিদ্যুত্ উপাদন সক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এরই মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন সাত জেলা এবং ২৮৮টি উপজেলা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। মুজিববর্ষের মধ্যে অবশিষ্ট উপজেলাগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৩ কোটি ৮৭ লাখ এবং দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুত্ সুবিধার আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট ২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের অবস্থান প্রত্যন্ত অফগ্রিড এলাকাসমূহে। এ সব এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল এবং সোলার মিনিগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুত্ পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে অনেক বাধা ছিল। এখনো আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় সেসব বাধা পেরিয়ে এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে আমরা। বিদ্যুত্ উত্পাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত নিয়োজিত সবাই একটি দল হয়ে কাজ করার ফলাফল হলো—নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এ অর্জন।
মাথাপিছু বিদ্যুত্ উত্পাদন বেড়েছে ২০০৯ সালের প্রথমভাগে দেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত্ সুবিধার বাইরে ছিল। তখন উত্পাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। গত এক যুগে মাথাপিছু বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ২২০ থেকে ৫১২ কিলোওয়াট ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুত্ বিভ্রাট কমেছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কৃষিসেচে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ২০০৯ সালে দেশে সেচ সংযোগ ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার। এখন সেটি ৩ লাখ ৬২ হাজার। শুধু জনপদ আলোকিত বা কৃষিতে উন্নতি নয়, অর্থনীতিতেও বড় পরিবর্তন এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক যুগে দেশের অর্থনীতিতে যে অর্জন, তাতে বিদ্যুত্ পরিস্থিতির উন্নতির বড় ভূমিকা রয়েছে। শিল্প উত্পাদনে গতি সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিও নতুন প্রাণ পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সব মানুষের কাছে বিদ্যুেসবা পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। সামান্য সুযোগ-সুবিধা পেলেই সাধারণ মানুষের ভাগ্যের বড় পরিবর্তন হয়ে যায়। গ্রিডভুক্ত শতভাগ এলাকায় বিদ্যুতায়ন হয়েছে। বিদ্যুতায়িত গ্রাম-শহর-উপজেলার সমাজ ও অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এটি আমাদের উন্নত বাংলাদেশের পথে হাঁটতে আরো সাহসী করে তোলে।’
দ্বীপে বিদ্যুত্ সাবমেরিনে, পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় সৌর
সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলাকে জাতীয় গ্রিডের আওতায় আনা হয়েছে। কক্সবাজারের প্রায় ২১৫ বর্গকিলোমিটারের কুতুবদিয়া দ্বীপকেও পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের কাজ চলমান রয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের জন্যও একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। আইপিপিপির মাধ্যমে হাতিয়া দ্বীপে ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করছে পিডিবি।
আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন জানান, তার সংস্থায় আওতায় ৪৬২টি উপজেলার মধ্যে ৪৬১টিতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। অফগ্রিডে থাকা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে।
পার্বত্য তিন জেলায় ৫৬ হাজার গ্রাহকের কাছে বিদ্যুত্ পৌঁছানোর কাজ চলমান রয়েছে। এর বাইরে দুর্গম পাহাড়ে থাকা আরো ৪০ হাজার পরিবারের কাছে গ্রিড লাইনের বিদ্যুত্ নেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুত্সংযোগ দেওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রংপুর ও রাজশাহীতে গ্রিডের বাইরে থাকা দুর্গম চরে বিনা মূল্যে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করছে নেসকো। এতে ১৩টি চরে বসবাসরত ১২ হাজার ৬৯০টি পরিবার সৌরবিদ্যুত্ পাবে।
- ৭ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিলো সেনাবাহিনী
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ
- পর্যটন বিকাশে চালু হচ্ছে হোম স্টে সার্ভিস
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যে কারণে কৃতজ্ঞ সেনাবাহিনী
- করোনা চিকিৎসায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা
- আরো ২৪ ট্রেন চালু হচ্ছে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে
- অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়লো সাময়িক এনআইডির মেয়াদ
- প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদযাপন হবে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস
- করোনা নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ৪ চীনা বিশেষজ্ঞ