ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

ব্যাংক একীভূতকরণে লাগাম পড়ছে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৪  

ব্যাংক একীভূতকরণে লাগাম পড়ছে

ব্যাংক একীভূতকরণে লাগাম পড়ছে

সবলের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার তালিকা আপাতত আর দীর্ঘ হচ্ছে না। সর্বশেষ বেসরকরি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে সংকটাপন্ন ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ১০ ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এর বাইরে নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আগামীতে কোনো ব্যাংক একীভূত করার প্রয়োজন দেখা দিলে এই ১০ ব্যাংকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে। এই ১০টির মধ্যে ৬টির আর্থিক ভিত্তি একেবারেই দুর্বল।

সম্প্রতি ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় ও বাধ্যতামূলকভাবে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত যে ১০টি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি সরকারি ব্যাংক ও পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক। সরকারি যে ৫টি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও বেসিক ব্যাংক। এর মধ্যে সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল এবং কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাবকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বেসরকারি যে ৫টি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইউসিবি, ন্যাশনাল ও পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ও সিটির সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের বাইরে একীভূত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কোনো ব্যাংক থেকে এখনো দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলে ব্যাংক মার্জারের পাঁচটি প্রপোজাল পেয়েছি। আপাতত এই প্রস্তাবগুলোর বাইরে আর নতুন কোনো প্রস্তাব আমরা নেব না। এই ব্যাংকগুলো একীভূত করার পর প্রয়োজন হলে নতুন মার্জারে যাওয়া হবে। এগুলোর প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো ব্যাংক মার্জার করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।’ পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে কোন কোন ব্যাংক রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক রয়েছে। বাকি নামগুলো তো গণমাধ্যমে চলে এসেছে।’ ব্যাংক একীভূত করার সব ধরনের প্রস্তুতি ও আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অডিটর নিয়োগ, সম্পদ ও দায় ঠিক করা, শেয়ার দর ঠিক করা, শেয়ার অংশ নির্ধারণ ও আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই পাঁচ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিজ্ঞতা নেবে। কারণ অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন আছে, তারপর দেখা যাবে।’

বেসিকের কর্মীদের দাবি : বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রীর কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে ব্যাংকটির কর্মীরা সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গত ১৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং আর্থিক খাতকে প্রভূত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় ব্যাংক একীভূতকরণের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। সেক্ষেত্রে বেসিক ব্যাংককে মূলধারার অপর একটি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হলে সব বিবেচনায় তা হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে আমাদের অর্থাৎ ব্যাংকের সব কর্মীর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাও দূর হবে।’

ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হচ্ছে ইউসিবিতে : গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বেসরকারি ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে নানা সংকটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ইউসিবি ব্যাংককে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গত ডিসেম্বরে আর্থিক নানা অনিয়মের কারণে সংকটে পড়া সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পর্ষদে জায়গা পাননি সিকদার গ্রুপের তিন পরিচালক। পুরনো পর্ষদের মধ্যে থেকে তিনজনকে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে সিকদার পরিবারের এক সদস্য রয়েছেন।

ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলছি, আলোচনা চলছে; কিন্তু ব্যাংক ঠিক হয়নি। যার সঙ্গে গেলে বনিবনা ভালো হবে- তার সঙ্গেই যাব। কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা শুধু প্রক্রিয়াটা শুরু করেছি। এখনো অনেক আলোচনা বাকি।’

গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূত করার পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নিলে গ্রহীতা ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, সিআরআর, এসএলআর ও এলসিআরের বিপরীতে বিভিন্ন হারে যে প্রভিশন রাখতে হয়, তাতে ছাড় দেওয়া হবে তিন বছরের জন্য।

গ্রহীতা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা প্রদান, মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার ইস্যু, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুকরণে সহায়তা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। দায়িত্ব নেওয়ার পরবর্তী তিন বছর দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন গ্রহীতা ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে যুক্ত হবে না। এর ফলে একীভূত হওয়ার পরও দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের কোনো প্রভাব পড়বে না গ্রহীতা ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর। এর বাইরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে যে কোনো বিষয়ে সুবিধা নিতে পারবে গ্রহীতা ব্যাংক।

এর আগে ‘রোডম্যাপ’ ও ‘পিসিএ’ নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছিল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় কোনো ব্যাংক একীভূত হতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ‘দুর্বল ব্যাংক’ চিহ্নিত করবে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত দেবে কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়