ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার মামলা: তদন্ত প্রতিবেদন ৮ জুলাই

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ১৫ জুন ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে সাভার মডেল থানায় চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলাটি তদন্ত করে আগামী ৮ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার মামলার এজাহার গ্রহণ করেন এই নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এএসআই ওসমান মুন্সি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগে, গতকাল সোমবার সাভার থানায় পরীমনি বাদী হয়ে উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। এরপর রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজন গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় পরীমনি তার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তাকে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করে। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি পরীমনিকে অনুরোধ করে, এখানে পরিবেশ সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। তারপর পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করে। 
টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। তখন পরীমনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। 

এসময় মদ্যপান করতে না চাইলে আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ জোর করে পরীমনির মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে পরীমনি সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পান। তখন আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরীমনিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এমনকি পরীমনির শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং তাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে পরীমনির গায়ে ছুড়ে মারে। তখন তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি আসামি নাসিরকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে। 

এ সময় পরীমনি ৯৯৯–এ কল করতে গেলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়া হয়। আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি নাসিরকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।

মামলার অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামি অমি পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরীমনির বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামির সহায়তায় আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন পরীমনি তার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পান। এরপর আনুমানিক রাত তিনটার সময় পরীমনি তার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় ফিরে যান।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে পরীমনিকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। ওই বিষয়ে তার পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

উল্লেখ্য, নাসির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপার ব্যবসায়ে আছেন। ১০ বছর ধরে মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্সের আগে তিনি মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের এমডি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান সরকারের গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি-বেসরকারি নানা ঠিকাদারি কাজ করেন।

নাসির ইউ মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার ৯ম কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়