ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির দায়িত্ব নেবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও কমিটির প্রধান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। হাফিজুর রহমান একই সঙ্গে ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান।
তিনি বলেন, ‘সভায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্সের বিষয় উঠে এসেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু ইতোমধ্যে আইন অমান্য করেছে, সুতরাং মিনিস্ট্রি সরাসরি কোনো দায়িত্ব না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেফার করে দেবে তারা যাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটা হলো কমিটির সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত।’
এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলেও জানান হাফিজুর রহমান।
মহাপরিচালক বলেন, ‘আরও দু-একটির (ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে ছোটখাটো সিদ্ধান্ত আছে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে কমিটির সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করবো। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে আমরা এক্ষেত্রে আরও কিছু করতে পারবো কিনা। এর আগেও আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। তারা কিছুটা কাজ করলে অলরেডি আমরা যতটা জানি। আজও সিদ্ধান্ত হয়েছে এটা তাদের হাতেই দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
‘‘আমরা দশটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চেয়েছি। একটার পেয়েছি, বাকি নয়টির তদন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একই সঙ্গে একটা রিকোয়েস্ট করেছিল যে, স্বাধীন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে এই কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করা যায় কিনা। কিন্তু এটার একটা আইনগত সমস্যা আছে। মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো কোম্পানির অডিট করতে পারবে কি না? সেটা আমরা যাচাই করে দেখছি, আইনগতভাবে আমরা সেটা পারি কি না। আমরা যদি আইনগত মতামত পাই তবে তৃতীয় পক্ষের অডিটর দিয়ে অডিট করাবো।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা মামলা লাগে। এক্ষেত্রে সেই রকম কিছু হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলা করলে করবেন ভোক্তা কিংবা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে তথ্য পেয়েছি, ওখানে আমাদের একটা গ্যাপ পরিলক্ষিত হয়েছে, তার দায় ও সম্পদের মধ্যে বড় যে পার্থক্য সেটা কোথায় গেছে? এছাড়া গ্রাহকের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে, বিনিময়ে পণ্য না দিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এই বিষয়গুলো ওখানে আসে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায়ও ডিজিটাল প্রতারণা আছে, সেখানেও এটা অপরাধ। ভোক্তা অধিকার আইনেও কিছু অপরাধ আছে। এই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছি। আগেও জানিয়েছি। এই মিটিংয়ের রেফারেন্সে আবার জানানো হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, সব কোম্পানি আরজেএসসিতে (যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়) নিবন্ধন করেনি। ই-অরেঞ্জ আরজেএসসিতে নিবন্ধন করেনি, তবে ইভ্যালি, ধামাকা এগুলো আরজেএসসিতে নিবন্ধন হয়েছে। আরজেএসসিতে নিবন্ধনের ফলে একটা কোম্পানির সৃষ্টি হয়, কিন্তু সে কী কাজ করবে তা কোম্পানি আইনে নেই। খারাপ কিছু করলে কোম্পানি আইনে সরাসরি তাকে বন্ধ করার বিধান নেই। তবে যিনি সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি আবার বন্ধও করতে পারেন। সেভাবে তারা বন্ধ করতে পারে। তবে কোম্পানি বন্ধ করে দিলে...এখন যে সমস্যাটা হয়েছে..এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) করার পর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার করার পর এখন আমরা বড় ধরনের কোনো অনিয়ম দেখছি না। এসওপি করার আগে যে লেনদেন হয়েছে, কাস্টমার যে পেমেন্ট দিয়েছে সেই পেমেন্টের মালামাল তারা এখনও বুঝে পায়নি। ওই জায়গাটা নিয়ে আমাদের বড় সমস্যা হয়েছে।’
ইভ্যালি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এক বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিক একটি তদন্ত করেছে জানিয়ে ই-কমার্সে সেলের প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে কিছু অপরাধ হয়েছে বলে ধারণা করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাতটি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু করেনি তা নয়। মহামারির কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে এসওপিটা ফাইনাল করতে। হ্যাঁ, তখন যদি আরও হার্ড লাইনে যাওয়া যেত তাহলে হয়তো এতটুকু ড্যামেজ হতো না, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম তখন থেকেই।’
‘ইভ্যালির গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া টাকা কোথায় গেছে, সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাইনি। এখন আমরা ধামাকার কাছে সেই তথ্যটা চাচ্ছি। জানতে চাচ্ছি পরিস্থিতিটা কী, তার এক্সিটের কোনো প্ল্যান আছে কিনা। এখন তারা যে প্ল্যানটা দিয়েছে সেটা দিয়ে এগোতে পারবো কিনা, সেটা এখনও বিবেচনাধীন। একেবারে পরিত্যক্ত করা হয়নি।’
যে টাকার খোঁজ পাননি, তা পাচার হয়েছে বলে মনে করেন কী- এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছি- এই টাকা কোথায় গেছে, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সন্দেহ আছে। পাচার হতে পারে বা অন্য কোথাও সরানো হতে পারে। এটি যেন তারা তদন্ত করে বের করে। এই তদন্ত এখনও অব্যাহত আছে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালি কিংবা অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কিনা- জানতে চাইলে ই-কমার্স সেলের প্রধান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি বাদী হয়ে মামলা করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে যেমন একটা চিঠি দিয়েছিল ফ্যাক্ট উল্লেখ করে, আমরা এবারও সেভাবে চিঠি দেবো।’
এত কিছুর পর গ্রাহকদের স্বার্থ আপনারা রক্ষা করতে পারবেন কিনা- এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এটা পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। সরকার জনগণের জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখানে আমরা ইভ্যালির প্রতিও কোনো মায়া দেখাচ্ছি না, এমনকি মার্চেন্টের প্রতি যে খুব আগ্রহ তাও না, ক্রেতাদের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি।
তিনি যেন প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা পান, অনেক ক্রেতা আছেন না বুঝেই যুক্ত হয়ে গেছেন। আমরা চাই তারা এখান থেকে সেফলি বের হোক। তার পণ্যটা বুঝে পাক। মার্চেন্টরাও তাদের পাওনা বুঝে পাক সেটাই আলটিমেট টার্গেট। কিন্তু আমি এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। এটা ফাইনালি নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা। টাকার ব্যবস্থা না হলে এটা সম্ভব নয়। টাকাটা সে নষ্ট করে থাকলে, অন্যত্র পাচার করলে, সেটা যদি উদ্ধার করা না যায় তাহলে ডিফিকাল্ট হচ্ছে।’
অনিয়ম করে শাস্তি নিশ্চিত না হলে অন্যরাও উৎসাহিত হতে পারে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন যিনি অপরাধ করেছে তাকে যদি আমরা শাস্তি না দিই তাহলে অন্যরা অপরাধ করতে প্রলুব্ধ হবে, এটা আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় আছে, অপরাধীর যাতে শাস্তি হয়। ভবিষ্যতে যাতে এদের অনুসরণ করে কেউ অপরাধ করতে না পারে। অভ্যন্তরীণভাবে আমাদের আলোচনা হচ্ছে, আমরা সফট হতে পারি কি না, এর ক্ষতিকর দিকও আছে অনেক। এটা আমরা বিবেচনা করছি, এর থেকে কীভাবে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব।’
হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
- নতুন ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত
- সংকটের মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড
- সুখবর আসছে ব্যাংক সুদে
- সাইবার হামলা: নিজস্ব কার্ডের বাইরে লেনদেন স্থগিত
- জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমলো
- করোনা সংকটেও বিসিক শিল্প নগরীতে চাল উৎপাদন অব্যাহত
- ঈদের নতুন টাকা পাওয়া যাবে আজ থেকে
- দেশ সেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে যুক্ত হলো পারটেক্স বেভারেজ
- ঈদের ছুটিতে বন্দরে ডেলিভারি স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ
- পাঁচ লাখ টাকার রেমিট্যান্সে কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা