ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে হাইকোর্টের সাত নির্দেশনা স্থগিত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৭ জুন ২০২০  

হাসপাতালে আসা সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাইকোর্টের ১০ দফা নির্দেশনার মধ্যে ৭টি নির্দেশনা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।  

অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা হাসপাতালগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কিনা, আইসিইউ বেডের জন্য অতিরিক্ত ফি না নেয়া, অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত তিনটি নির্দেশনা বহাল রেখেছেন আদালত।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিত আবেদনের শুনানি করে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বহাল থাকা নির্দেশনা তিনটি হলো

১. চিকিৎসা বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ৩০ জুনের আগে আদালতে দাখিল করতে হবে।

২. আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান বা দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্থগিত হওয়া সাতটি নির্দেশনা হলো

১. উপরোক্ত নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করতে হবে।

২. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২৪ মে জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর ৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৬ জুন পর্যন্ত কতজন কোভিড-১৯ এবং নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। সঙ্গে ৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের একটি তালিকা দিতে হবে।

৩. বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অত্র আদালতে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

৪. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিশেষত ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়; সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৫. কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।

৬. স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগে’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নেয়া কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০১২ এর ধারা-১৪ অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ’ এর কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। 

গত সোমবার হাসপাতালে আসা সব ধরনের রোগীদের  চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপরোক্ত নির্দেশনা ও অভিমত দিয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে আজ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়