ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সেতু দিয়েই পার হবো পদ্মা, বেশিদিন লাগবে না

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১৮ অক্টোবর ২০২০  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

এই সেতু আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে অনেকের মতো আমিও সংশয়ে ছিলাম৷ তবে, এখন আশাবাদী যে, শীঘ্রই এই সেতু দিয়ে পদ্মা পার হবো৷

ছোটবেলায় বছরে অন্তত দু'বার বড় দু'টো ভ্রমণ করতাম আমি৷ থাকতাম ঢাকায়, তবে দুই ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশের দুই প্রান্তে যেতে হতো৷ রোজার ঈদে দাদাবাড়ি, মানে বাগেরহাট আর কোরবানির ঈদে নানাবাড়ি, মানে চট্টগ্রাম৷ দাদা-দাদী, নানা-নানী বেঁচে ছিলেন তখন, ফলে ছুটির সময়টা পরিবারের সাথে চমৎকার কাটতো৷চোখ বুঁজে ছোটবেলার যত স্মৃতি এখনো মনে করতে পারি, তার মধ্যে দাদা-দাদী আর নানা-নানীর সঙ্গের স্মৃতিই সবচেয়ে বেশি৷

সেসময় এই দুই ভ্রমণের একটি করতে হতো নৌপথে৷ ঢাকা থেকে লঞ্চে বাগেরহাট৷ সেই লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কখনো কখনো ভীতিকর ছিল৷ বিশেষ করে লঞ্চটি যখন প্রমত্ত পদ্মা আর মেঘনার মিলনস্থল অতিক্রম করতো, মনে হতো এই বুঝি ডুবে যাবে৷ সেই অংশটা পার হওয়ার সময় আমি তাই কেবিনের সামনে কোনোকিছু আকড়ে ধরে বসে থাকতাম৷ বাকি ভ্রমণ অবশ্য ভালোই কাটতো৷ 

তখন ঢাকা থেকে লঞ্চে বাগেরহাট যেতে, এখনো যতটুকু মনে আছে তাতে দু'দিনের মতো লেগে যেতো৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন দেখেছি, একসময় লঞ্চের জায়গায় ভ্রমণের বাহন হয়ে ওঠে বাস৷ তখন আবার আরিচা-পাটুরিয়া ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ফরিদপুর, মাগুরা, যশোর হয়ে বাগেরহাট যেতাম৷ সময় লঞ্চের চেয়ে কম লাগতো বটে, তবে ফেরিঘাটে যানজট কিংবা নদীতে কুয়াশা বেশি পড়লেই অনেকক্ষণ আটকে থাকতে হতো রাস্তায়৷ কখনো কখনো সেই ভ্রমণও তাই দু'দিনে গিয়ে ঠেকতো৷

বিকল্প এক পথের সূচনা হয়েছিল সম্ভবত নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে৷ মাওয়া-কাওরাকান্দি হয়ে গোপালগঞ্জের উপর দিয়ে বাগেরহাট যাওয়া যেতো আরো কম সময়ে৷ তবে, শুরুতে সেই পথ ছিল অনেকটা সাপের লেজের মতো আঁকাবাঁকা৷ ফলে দুর্ঘটনা ঘটতো প্রচুর৷ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই রুটে পরিবর্তন আসতে শুরু করে৷ মহাসড়ক বড় হয়েছে, আঁকাবাঁকা রাস্তা অনেকটাই সোজা হয়েছে সময়ের সাথে সাথে৷

এই রুটে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটেছে গত কয়েক বছরে পদ্মা সেতুকে ঘিরে৷ গতবছর দেখেছি, গোপালগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু অবধি যে মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে, সেটি জার্মান অটোবান বা মহাসড়ক থেকে কোনো অংশে কম নয়৷ অনায়াসে একশ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যায় সেই রাস্তায়৷ ঢাকা থেকে মাওয়া অবধি রাস্তাও অনেক বড় এবং আধুনিক করা হয়েছে৷

এখন বাকি শুধু পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়া বাকি৷ সত্যি কথা বলতে গেলে পাঁচ বছর আগেও আমার ধারণা ছিল এই সেতু শেষ অবধি চালু হবে না৷ তবে, গত বছর কাজের যে অগ্রগতি আমি দেখেছি, সেতুর যতটুকু অংশ দৃশ্যমান এখন - তাতে আমার বিশ্বাস আগামী দু’বছরের মধ্যে এই সেতু দিয়েই পদ্মা পার হওয়া যাবে৷ ছোটবেলায় যে পথ যেতে দু'দিন লাগতো, সেই পথ পাড়ি দেয়া যাবে কয়েক ঘণ্টায়৷ অন্যসব কিছু বাদ দিলেও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য এটা অবশ্যই এক বড় ব্যাপার৷

সর্বশেষ
জনপ্রিয়