ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেল ডব্লিউএফপি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১১ অক্টোবর ২০২০  

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। নোবেল পুরষ্কারের অন্যান্য আরো ক্যাটাগরি থাকলেও শান্তিতে নোবেল কে পাবেন তা নিয়েই আলোচনা হয় সবচেয়ে বেশি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো হেভিওয়েট ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জলবায়ু আন্দোলনে ঝড় তোলা কিশোরী গ্রেটা থানবার্গের নাম থাকায় এবার জল্পনা-কল্পনা একটু বেশিই ছিল।

নোবেল জেতায় এক কোটি সুইডিশ ক্রোন (৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা) অর্থমূল্যের এই পুরষ্কার আগামী ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ডব্লিউএফপির কাছে তুলে দেয়া হবে।

তবে এমন কী এমন করেছে সংস্থাটি, যার জন্যে ১০৭টি সংস্থা ও ২১১ জন ব্যক্তিকে পেছনে ফেলে পুরস্কার জিতে নিল তারা?

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বলছে, ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং ক্ষুধাকে যুদ্ধ-সহিংসতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধের চালিকাশক্তি হিসেবে অবদান রাখায় সম্মানজনক এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে।

নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসন বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তাকে শান্তির উপকরণ হিসেবে গড়ে তুলতে বহুজাতিক সহযোগিতায় মূল ভূমিকা পালন করে ডব্লিউএফপি।

করোনাভাইরাস মহামারি সংস্থাটির গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে এ কমিটি। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বৈশ্বিক মহামারির মুখে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে জাতিসংঘের সহযোগী এ সংস্থাটি। গত বছরও ৮৮টি দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। এর কয়েক মাস পরেই ইরানের উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। সঙ্গে সঙ্গেই গম, চিনি, চায়ের মতো খাদ্য সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যায় ডব্লিউএফপি।

সেই থেকে শুরু। এরপর নিয়মিতই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সহিংসতা কবিলত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

ইয়েমেন: ডব্লিউএফপি বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনেই তাদের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি চলছে। দেশটির প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে সাহায্য করার লক্ষ্য রয়েছে সংস্থাটির। তবে এর জন্য নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ইয়েমেনের নেতারা ভুক্তভোগীদের খাদ্য সহায়তা সরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ডব্লিউএফপি। চলতি বছর আর্থিক সংকটেও পড়েছে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি।

আফগানিস্তান: ডব্লিউএফপি মতে, তারা এ দেশটিতে ক্ষুধার বিরুদ্ধে এমনভাবে লড়তে চান যা শান্তিতে অবদান রাখতে পারে। তবে এর জন্য তাদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার কয়েক দশকের জটিল যুদ্ধ পরিস্থিতি। আফগানিস্তানে খাদ্য সহায়তায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর হামলার ঘটনাও দেখা গেছে।

দক্ষিণ সুদান: উত্তর আফ্রিকার এ দেশটিতে যুদ্ধ-দুর্ভিক্ষ দু’টি সংকট মোকাবিলাতেই সহযোগিতা করছে ডব্লিউএফপি। দক্ষিণ সুদানে কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে, কমে গেছে শস্য উৎপাদন, ফলে বেড়ে গেছে আমদানিনির্ভরতা। অর্থাৎ দেশটির বহু মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যেই ২০১৪ সালে সেখানে ডব্লিউএফপির এক কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়েছিল।

এদিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতলেও ডব্লিউএফপি কিন্তু সমালোচনামুক্ত নয়। অতীতে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কিনে দেশটিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর থেকেই সংস্থাটি স্থানীয়ভাবে পণ্য কেনায় ভারসাম্য রক্ষা এবং খাবারের সম্ভাব্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধের চেষ্টা করে।

এছাড়া, কেনিয়ার জেমস শিকওয়াতির মতো কিছু অর্থনীতিবিদ দাবি করেছেন, ডব্লিউএফপি কিছু দেশকে বিদেশি সহায়তার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল করে তুলছে।

এর বাইরে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আরো একটি বড় অভিযোগ হচ্ছে যৌন হয়রানি। গত বছর ডব্লিউএফপির অভ্যন্তরীণ এক জরিপে অন্তত ২৮ জন কর্মী বলেছেন, তারা সংস্থাটিতে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষণ অথবা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আরো ৬৪০ জন জানিয়েছেন, তারাও যৌন হয়রানির ভুক্তভোগী অথবা প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি

সর্বশেষ
জনপ্রিয়