ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মুজিববর্ষে ঘর পাচ্ছেন জয়নব

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২০, ৪ মার্চ ২০২১  

অনলাইন ছবি

অনলাইন ছবি

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউপির জাকির হোসেন মালের বাড়িতে বসবাস করেন জয়নব ভানু। সমাজসেবা থেকে বয়স্ক ভাতা পেলেও তার জমি নেই, ঘরও নেই।

ভেদরগঞ্জের ইউএনও তানভীর-আল-নাসীফ বলেন, জয়নব ভানুর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার যদি ঘর ও জমি না থাকে, তাহলে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাকে ঘর দেয়া হবে। সেটি সম্ভব না হলেও যে কোনো একটি ঘর দিয়ে তার আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে জয়নব ভানু জানান, স্বামীর নাম শরীফ আলী ব্যাপারী। স্বামীকে নিয়ে তিনি চাঁদপুর জেলার রাজ রাজারশ্বর এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন। সুখের সংসার ছিল তার। তাদের সংসার জীবনে জন্ম নেয় এক ছেলে। নাম বিল্লাল হোসেন ব্যাপারী। কিন্তু হঠাৎ নদী ভাঙন শুরু হলে, তাদের বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। সব হারিয়ে জয়নব, তার স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে এসে আশ্রয় নেন শরীয়তপুরের দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নে।

কয়েক বছর পর জয়নবের স্বামী শরীফ আলী আরেকটি বিয়ে করে গায়েব হয়ে যান। সেই থেকে ছেলে বিল্লালকে নিয়ে মোহাম্মদ আলী মোল্লা কান্দি গ্রামের জাকির হোসেন মালের জমিতে তৈরি একটি জরাজীর্ণ দোচালা একটি ঘরে মাথা রাখার ঠাঁই মেলে জয়নবের। অন্যের বাড়িতে থেকে সন্তানকে মানুষ করতে ও দুমুঠো খেতে ভিক্ষা করেন জয়নব।

এরই মধ্যে বিয়ে করেন জয়নবের ছেলে বিল্লাল। বিল্লালের দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াসিন ব্যাপারী শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে রিপন ব্যাপারী বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকে। মেয়ে আমেনা আক্তার ও রমনা। ছোট ছোট রেখে তাদের মা মারা যান। আর তাদের বাবা বিল্লাল আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। চলে যাওয়ার পর ৮ বছর যাবত ওই চার সন্তান দাদি জয়নব ভানুর কাছে থাকে। নাতি-নাতনি ও নিজের জীবনযাপনের জন্য তাকে নির্ভর করতে হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির ওপর।

গত বছর ঝড়ে সেই দোচালা ঘরটি ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। ভিক্ষা করে নাতি-নাতনিদের নিয়ে দিনে ভাঙা ঘরটিতে থাকেন জয়নব। রাত হলে দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হযরত লোকমান সরদারের বাড়িতে থাকেন।

জয়নব ভানু এখন বয়সের ভারে নিজেও অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে শরীর ব্যথায় ভুগছেন। তারপরও নাতি-নাতিকে নিয়ে সারা দিন ভিক্ষা করেন। দিনে একবার রান্না করে নিজে খান, নাতি-নাতনিকে খাওয়ান। বললেন, এভাবে জীবন যেন আর চলে না।

মনের কষ্টগুলো প্রকাশ করে জয়নব ভানু বলেন, ‘বেয়ানে চা খাইয়া গেছি হবায় আইছি। হাঁততে পারি না দম বাইরায় যায়। কি করুম? হাডে যাই বাজরে যাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘পোলায় মোর খোঁজ খবর নেয় না। পোলায় চাইরডা পোলাপান থুইয়া আরকটা বিয়া কইরা আমাগো থুইয়া গেছেগা। তাই নাতি-নাতনিগো নিয়া ভিখা কইরা খাই। ঘর ভাইংগা গেছে। ঘর নাই দুয়ার নাই, শুইতেও পারি না। হাডে যাই, বাজারো যাই ভিখা কইরা এক ছডাক চাইলও পাইনা। রাইতে নাতি-নাতনিগো নিয়া রাইনডা খাই। ঘরডিতে বেড়া নাই গুরা নাই। মাইসের বাড়ি বাড়ি থাহি। কেই সাহায্য করে না। অনেক কষ্টের জীবন আমাগো।’

‘একটা ঘর খানের আশায়, আর একটু জায়গা জমির আশায় ভিখা করি। আর আমার কিছু চাওয়ার নাই। একটু জমি, ঘর পাইলেও অনেক উপকার হইত।’

দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হানিফ শেখ জয়নব ভানুর পরিবারকে সরকারের নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফয়জুল বারী বলেন, জয়নব ভানুকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। তার প্রতিবন্ধী নাতিকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তার নাম তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়