ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মহামারির মাঝেও উজ্জ্বল পুঁজিবাজার, বাড়ছে মূলধন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২ ডিসেম্বর ২০২০  

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

মহামারি করোনার থাবা সারাবিশ্বে ভয়াল আঁচড় কেটেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। তবে মলিন হয়ে পড়া এই মহামারির দিনেও ক্রমশ উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। 

অনেকদিন থেকেই কিছুটা পিছিয়ে থাকা পুঁজিবাজার করোনার সময়ে এসে নতুন করে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠে বাড়তে শুরু করছে সব সূচক ও বাজার মূলধন। সর্বশেষ গত ৩১ মে থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। 

এদিকে ২৬ মার্চ করোনাজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনের পর ৩১ মে থেকেই পুনরায় লেনদেন শুরু হয়। বাজার খুলে দেয়ার পর প্রথমে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও সরকারের বিভিন্ন নীতির কারণে ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে থাকে পুঁজিবাজার। বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই সব সূচক, আর্থিক ও শেয়ার লেনদেনের গ্রাফ বাড়তে থাকে। 

এর আগে ৩১ মে লেনদেন শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ডিসেম্বরের প্রথম দিনে এসে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ ছয় মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন ৭৬ হাজার কোটি টাকারও কিছু বেশি বেড়েছে। 

একই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ হাজার ৮ পয়েন্ট থেকে ৮৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩২ কোটি টাকা।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন,  সরকারের সহায়ক প্রচেষ্টার কারণে মহামারির এই সময়ে সূচক, লেনদেন এবং বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি অবশ্যই ইতিবাচক বিষয়। এজন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন কমিশনকেও ধন্যবাদ দিতে হবে। 

এদিকে মহামারির এই সময়েও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫ মাসে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪১ টাকা। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ কোটি টাকা বেশি। 

ডিএসই সূত্র জানায়, চলতি ২০২০ সালের করোনাকালীন (জুন থেকে অক্টোবর) এই পাঁচ মাসে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন থেকে ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৮ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। একই সময়ে উদ্যোক্তা পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি থেকে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৩ টাকা। ফলে চলতি বছরের করোনাকালীন সর্বশেষ পাঁচ মাসে ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪১ টাকা।

অন্যদিকে ২০১৯ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে উদ্যোক্তা পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি থেকে রাজস্ব আদায় হয় ২৬ কোটি ২৭ লাখ ২১ হাজার ৮৯১ টাকা। ফলে ২০১৯ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৬৫ কোটি ৭৮ লাখ ৫৮২ টাকা। এতে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের সর্বশেষ পাঁচ মাসে ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৯ টাকা।

এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিএসইসির নানা পদক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এতে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। ফলে ডিএসইর লেনদেন আগে যেখানে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হতো, বর্তমানে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে। লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্বও বাড়ছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৯০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হলেও আমাদের দেশে ট্রেডারের সংখ্যা বেশি। তাই পুঁজিবাজারে আইনের শাসন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে ২০২১ সালের মধ্যে ডিএসইর লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তখন পুঁজিবাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় আরো বেড়ে যাবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ থাকায় পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়া এবং নতুন কমিশনের নানা উদ্যোগের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে পুঁজিবাজার থেকে সরকার দুই ধরনের রাজস্ব আদায় করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে- স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ওপর উৎসে আয়কর বাবদ রাজস্ব আদায়। অন্যটি হলো-পরিচালক, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও প্লেসমেন্ট শেয়ার হোল্ডারধারীদের শেয়ার বিক্রি বাবদ মূলধনী মুনাফা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়