ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেকারত্ব ঘোচাতে সম্ভাবনাময় স্কোয়াশ চাষ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৪ মার্চ ২০২১  

অনলাইন ছবি

অনলাইন ছবি

ফেনীর সোনাগাজীতে চাষ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ। দেখতে শসার মত কুমড়া জাতীয় শীতকালীন এই সবজি অতি পুষ্টিকর, সু-স্বাদু, স্বল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল, লাভজনক। 

স্কোয়াশ চাষ করে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছেন নুরুল আফছার। বর্তমান তার ক্ষেতে বিষমুক্ত স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারে স্কোয়াশের ফল দাম ভালো থাকায় তিনি স্কোয়াশ বিক্রি করে অনেক আয়ও করছেন। স্কোয়াশ সবজি এই প্রথমবারের মতো এ উপজেলায় চাষ হচ্ছে। 

স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ অনেকটা দেখতে শশা আকৃতির। এটি শশার মতো লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়োর মতো।  

কৃষক শহীদুল্লাহ কাওছার বলেন, স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব। পূর্ণবয়স্ক একটি স্কোয়াশ গাছ অল্প জায়গা দখল করে। স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি। বাজারে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। 

অপ্রচলিত এ সবজি চাষের উদ্যোক্তা নুরুল আফছার একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের চরচান্দিয়ায় গড়ে তোলা উদ্যোগের নাম দিয়েছেন রহমান এগ্রো। আপন ভাই শহীদুল্লাহ কাওছারসহ গড়ে তোলা উদ্যোগটি বড় আকারে নিয়ে যেতে তৈরি করছেন নতুন পরিকল্পনা। 

ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক নুরুল আবসার জানান, মাত্র ৪০ থেকে ৫০ দিনে স্কোয়াশের ফলন পাওয়া যায়। উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় আয়ের পরিমাণ ছয় গুণ বেশি। আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ করা হয়। মিষ্টি কুমড়া জন্মায় সেসব জায়গায় এই সামার স্কোয়াশ চাষ করা যায়। স্কোয়াশ চাষ প্রতি বছর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

নুরুল আবসার জানান, বাড়ির পাশে ৪৫ শতক জায়গায় প্রাথমিকভাবে স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম ও ব্রকলি করার পরিকল্পনা থাকলেও কৃষিবিদদের পরামর্শক্রমে স্কোয়াশ ও ক্যাপসিকাম চাষে মনস্থির করেন। ২০ শতক জায়গায় ১২০০ গাছের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু করেন স্কোয়াশ চাষ। 

কৃষিবিদরা বলছেন, লাভজনক এ শস্যটি ফেনীর কৃষিতে যোগ করছে নতুন সম্ভাবনার। 

সোনাগাজী পৌরসভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ওষধ, সার সরবরাহ করা হয়েছে। নিয়মিত পরামর্শ ও উৎসাহ দেয়া হচেছ। রবি শস্যটি অপ্রচলিত হলেও খুবই লাভজনক। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ১০টি ফলন হতে পারে। মানুষ এ সম্পর্কে জানতে পারলে উৎপাদন ও চাহিদা বাড়বে। 

ছাদ বাগান প্রেমী নুরুল আফসার জানান, বাড়ির ছাদে রয়েছে টমেটো, গাজর, আম, লিচুসহ নানাজাতের ফল ও সবজি। স্কোয়াশ এমন একটি উদ্ভিদ যা সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি উদ্ভিদগতভাবে একটি ফল হিসেবে বিবেচিত হলেও, মসৃণ ত্বক, ছোট বীজ এবং মাংসল শাঁস এর জন্য এটিকে সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেনী, নোয়াখালী অঞ্চলে অনেকের কাছে এটি কুছা হিসেবেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয় একটি খাদ্য। ফেনীর স্থানীয় বাজারে এ মুহূর্তে সবজির দর নিম্নমুখী হলেও উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় স্কোয়াশে আয়ের পরিমাণ ছয় গুণ বেশি। 

ডিপ্লোমা কৃষিবিদ আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, যারা বেকারত্ব ঘোচাতে চান তারা বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করতে পারেন। এটি খুবই লাভজনক। এক বিঘা জমির উৎপাদন খরচ, এর পুষ্টিমান এবং সর্বোপরি এর মাধ্যমে কীভাবে বেশি আয় করা সম্ভব, সে বিষয়ে আগে জানতে হবে। এ জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে। 

সেনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর স্কোয়াশ ফেনীর কৃষিতে নতুন যোগ হল। এর দামও ভাল, বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে কৃষক আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবে। 

স্কোয়াশের পুষ্টি সম্পর্কে ২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতিটি স্কোয়াশ ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও ভিটামিন বি-৬। স্কোয়াশ সবজিতে নায়াসিন, থায়ামিন, প্যানথোটোমিন এসিড ও ফলিড রয়েছে। এছাড়াও অনেক মিনারেলস রয়েছে। যেমন রয়েছে- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, খনিজ, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, আয়রন, ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। স্কোয়াশ ফল প্রতিদিন খেলে ডায়েট কন্ট্রোল করে। তাছাড়া নিয়মিত স্কোয়াশ খেলে ফ্রি রেডিকেলসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। 

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্ব-উদ্যোগে স্কোয়াশ চাষ চালু করায় আমরা খুবই খুশী। ভবিষৎ এ আরো কৃষকরা যাতে আগ্রহী হয় সে জন্য আমরা তাদের সচেতনতা সৃষ্টি করে সার ও বীজ সরবরাহ করার ব্যবস্থা করব। 

তিনি আরো বলেন, স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন ও বিদেশি জাতের সবজি। এটি মিষ্টি কুমড়ার মতো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মধ্যপ্রাচ্যের এই স্কোয়াশ চাষ অল্প খরচের ফসল। দ্রুত বর্ধনশীল একটি সবজি ও অল্প পরিশ্রমেই অধিক আয় করা সম্ভব। এ ফসলে কোনো রোগের উপদ্রব তেমন নেই। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন ভালো উৎপাদন ক্ষমতা নেই। স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়