ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বাংলাদেশের শ্রমমানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, বললেন আইনমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৭ নভেম্বর ২০২১  

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে শ্রমমানের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত রোডম্যাপের বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে চলছে। শুরু থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার।

ভার্চুয়াল ফ্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৩তম সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, শ্রমখাতে বিরাজমান ছোটখাটো বাধা দূর করার জন্য সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ফলে বাংলাদেশের শ্রমমানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

আইএলওকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে জবরদস্তি-শ্রম সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ২৯-এর প্রটোকল অনুসমর্থনের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। এছাড়া শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োগের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুমোদনের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে সহযোগিতার জন্য শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিটি অফিসে প্রি-অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতেও ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ২০১৩ সালের ১৩২টি থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ১০৪৫টিতে উন্নীত হয়েছে। এ বছর ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের সফলতা প্রায় ৯০ শতাংশ।

শ্রমমান পরিদর্শনের বিষয়ে তিনি জানান, শ্রম পরিদর্শকের ৮৯টি পদে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জনবল ও অর্থ বরাদ্দসহ কলকারখানা এবং পরিদর্শন অধিদপ্তরকে দ্বিতীয় ধাপে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। শ্রম পরিদর্শকদের পেশাকে আকর্ষণীয় করার জন্য পদোন্নতির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ে পদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ ও পদোন্নতির। কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের ২৩টি কার্যালয়কে লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট এপ্লিকেশনের (লিমা) আওতায় আনা হয়। কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে পরিদর্শন পরিচালনা কার্যক্রম শুরু করেছে, যা স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পেশাগত সেইফটি কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বর্তমানে কারখানা পর্যায়ে ৬ হাজারের বেশি সেফটি কমিটি কাজ করছে। শ্রমিকদের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য হেল্পলাইন চালু করেছে কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, জুন ২০২০ হতে জুলাই ২০২১ সময়কালে অনেক শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী শ্রমিক।

২০১৯ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত ১০৮তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে শ্রমিক প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশে আইএলও কনভেনশন ৮১, ৮৭ এবং ৯৮ বাস্তবায়নের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ২০২১ সালের জুন মাসে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে আইএলওতে দাখিল করে। রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ বিষয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে দায়ের করা কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে। ত্রিপক্ষীয় বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে রোডম্যাপ ও কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে।

আইএলও-এর সুপারিশ ও কনভেনশনের আলোকে শ্রম আইন, ২০০৬, শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ ও বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৯ সংশোধন এবং ইপিজেড শ্রম বিধিমালা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মামলার জট কমানোর জন্য নতুন নতুন শ্রম আদালত স্থাপন করা হচ্ছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মানসম্পন্ন পরিচালনা পদ্ধতি তৈরির জন্য আইএলও’র সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

চলতি মাসের এক তারিখ থেকে ভার্চুয়াল ফ্লাটফর্মে আইএলও-এর গভর্নিং বডির এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত তা চলবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন-শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী, জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গৌতম কুমার, কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউএন) সামিয়া আনজুম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. হুমায়ুন কবীর, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকেরুল আবেদীন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়