ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশেই তৈরি হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি, পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী মূল্যে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। আসছে একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। আর সেই বিস্ময়কে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে থেমে নেই মানুষও। এরই ধারাবাহিকতায় জ্বালানি তেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত গাড়িই হতে চলেছে ভবিষ্যতের বাহন। এর ফলে যেমন কমবে কার্বন নিঃসরণ, তেমনি পরিবেশও থাকবে দূষণমুক্ত।

এরই মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির এ বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ শুরু করেছে বিশ্বের বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে শুনতে স্বপ্ন মনে হলেও সেই স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশও।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১০০ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের কারখানা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে কারখানাটি তৈরি করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তাদের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া কারখানাটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই তাদের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আশার কথা হলো মাত্র সাত থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যেই জাপানি ও কোরিয়ান গাড়ির নকশায় তৈরি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এ গাড়ি গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

কারখানাটির অংশীদার ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। জাপানের হোন্ডা, নিশান ও ফ্রান্সের সিটরয়েনসহ জাপানি এবং ইউরোপীয় কয়েকটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কারখানা রয়েছে তাদের।

এদিকে, চট্টগ্রামের কারখানাটিতে শুধু চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়িই নয়; একই সঙ্গে মাইক্রোবাস, কাভার্ডভ্যান ও মিনি ট্রাক তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। শুরুতে বছরে ৩৫ হাজার প্রাইভেটকার, ৫০ হাজার তিন চাকার যান ও এক লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা।

দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের হাতের নাগালে রেখেই এ গাড়ির দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। থাকবে কিস্তিতে কেনার সুযোগও। 

তারা বলছেন, সাত থেকে ১০ লাখের মধ্যেই মিলবে পাঁচ সিটের হ্যাচব্যাক কার। মাত্র দেড় লাখ টাকা এককালীন জমা দিয়ে কেনা যাবে এ গাড়ি। সাত থেকে ১০ হাজার টাকার মাসিক কিস্তিতে শোধ করা যাবে বাকি টাকা।

অন্যদিকে, পাঁচ সিটের সেডান কারের দাম পড়বে ১৩ থেকে ১৪ লাখ। এককালীন কিছু টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা কিস্তিতে শোধের সুযোগ থাকবে এ গাড়িতেও।

এছাড়া স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যালের (এসইউভি) দাম পড়তে পারে প্রায় ২৫ লাখ। মোটরসাইকেলে দাম পড়বে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ।

সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, প্রতি এক হাজার কিলোমিটারের জন্য পেট্রলচালিত গাড়িতে খরচ হয় পাঁচ হাজার ৩৭৫ টাকা। এর বিপরীতে বৈদ্যুতিক গাড়িতে খরচ হবে মাত্র এক হাজার ২৫০ টাকা। পেট্রলচালিত গাড়ির চেয়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির যান্ত্রিক দক্ষতা বেশি এবং এটি পরিবেশবান্ধব বলেও সভায় জানানো হয়।

দেশে তৈরি হওয়া বৈদ্যুতিক এ গাড়ির ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া যাবে ঘরেই। এছাড়া সড়কের পাশে থাকা সিএনজি ও পেট্রল পাম্পের সঙ্গেই বসানো হবে চার্জিং ইউনিট। এ গাড়িতে জ্বালানি খরচ কমবে ৯০ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকারও কম জ্বালানি খরচ হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

১০০ একর জমির মধ্যে গাড়ির যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি ও চার্জার তৈরির জন্য আলাদা দুটি কোম্পানি গঠন করে স্থাপিত হচ্ছে আলাদা কারখানাও। এর মধ্যে একটির নাম বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড। যার অংশীদার হিসেবে রয়েছে হংকংয়ের জিয়াংসু রুইহং লিথিয়াম কোম্পানি লিমিটেড। অন্য কারখানাটির নাম মোটর টেকনোলজি লিমিটেড। এটির অংশীদার চীনের উহান সায়ান পাওয়ার টেকনোলজি কোম্পানি। এছাড়া অপর একটি কারখানায় তৈরি হবে মোটর কন্ট্রোলার চার্জার।

বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমদানি করা গাড়ির জন্য চার্জিং নীতিমালা নিয়েও কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, আমদানি করা বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশন ও ট্যারিফ নির্ধারণের বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়