ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দিনাজপুরে অন্ধ মা-ভারসাম্যহীন ছেলের দায়িত্ব নিলেন এমপি সাদিক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ১৬ মে ২০২১  

এমপি শিবলী সাদিক

এমপি শিবলী সাদিক

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সাতপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী আমেনা খাতুন। ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা খাতুন বয়সের ভারে অনেক আগেই হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। স্বামীও মারা গেছে ৮ বছর আগে। একমাত্র ছেলে লুৎফর রহমান (৪৭) মানসিক ভারসাম্যহীন।

দৃষ্টিশক্তি হারানো মা আর ভারসাম্যহীন ছেলের অবর্ণনীয় কষ্টের এক নির্মম হৃদয়স্পর্শী করুণ কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ার বদলৌতে দৃর্ষ্টিগোচর হয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি।

ছেলে লুৎফর রহমানকে (৪৭) নিয়ে বসবাস করছিল আমেনা খাতুন। একযুগ আগে ছেলে লুৎফর রহমান মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই দুই পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয় ছেলে লুৎফরের। ছেলেকে নিয়ে অনাহারে অদ্যহারে জীবন কাটছিল আমেনা বেগমের।

আমেনার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে স্থানীয় এক ব্যক্তি। স্পর্শকাতর ভিডিওটি নজরে আসলে বৃদ্ধা আমেনা এবং তার মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শিবলী সাদিক।

ভিডিওটি নজরে আসায় এমপি শিবলী সাদিকের নির্দেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন সন্ধ্যায় ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন এবং স্থানীয় সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার ছাপ্পু বৃদ্ধা আমেনার বাড়িতে হাজির হয়ে এমপির পক্ষে চাল, ডাল, তেল ও মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্যে সামগ্রী এবং মা-ছেলের পরিধানের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাক উপহার দিয়েছে। এছাড়াও বৃদ্ধা আমেনার হাতে নগদ অর্থ তুলে দিয়েছেন।

পাশাপশি ওই বৃদ্ধা এবং তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন পরিবারটির সমস্ত দায়ভার শিবলী সাদিক বহন করবে বলে আশ্বস্ত করেন ওসি আজিম উদ্দিন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃদ্ধা আমেনা খাতুন বলেন, ‘হামি অন্ধ। বেটাটাও পাগল। বেটাক শিকলে বন্দি করে থুছি। যাতে করে ওই হারায় (হারিয়ে) না যায়। তবুও ছেলেটি বারাই (বাহিরে) যায়। নিজ হাতে খোঁচা দিয়ে বেটাটার এক চোখ নষ্ট করে দিছি। যাতে বাড়ির বাহিরে যাবার না পারে। খেয়ে না খেয়ে মানুষের বাড়িত থাকা হামা হেরে দিন যায়। হামা হেরে চেয়ারম্যান মেম্বাররা কোনো ভাতাও করি দেননি। হামার হেরেও এমপি খাবার, কাপড় চোপড় দিয়া পাঠাছে। আল্লাহ ওমাক যুগ যুগ বাঁচা থুক। বাড়ির ধারের চেয়ারম্যান-মেম্বার খোঁজ নেয়নি। কিন্তু এমপি হামার খোঁজ নিছে।’

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সংস্য শিবলী সাদিক বলেন, ভিডিওটি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওই বৃদ্ধার বাড়ি লোক পাঠিয়েছি তার খোঁজ নেয়ার জন্য। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন ওই পরিবারটির ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করব। তাদের পুরো দায়িত্ব আমি আমার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছি। আমার প্রতিনিধিরা মাসে দুইবার করে পরিবারটির খোঁজখবর নেবে এবং সার্বিক সহযোগিতা করবে।

এমপি বলেন, ওই বৃদ্ধা মা এবং তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের থাকার জায়গা নেই। তারা বারান্দায় টিনের একটি চালার নিচে বসবাস করে। আমি তাকে ঘর করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং দফতরকে নির্দেশনা দিয়েছি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়