ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইকনোমিক জোন লেক মহামায়া

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

২০১০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর দেশের তৃতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি স্পেশাল ইকনোমিক জোন করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাগরের বুকে জেগে উঠা বিশাল চর অঞ্চলটি হেলিকপ্টারে ঘুরিয়ে দেখান। তখন কে জানতো সেই চরটিই এখন হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইকনোমিক জোন।

গত দুই বছর পূর্বেও এই এলাকাটি ৭ থেকে ৮ মিটার পুরো পানির নীচে তলিয়ে ছিলো। কিন্তু বর্তমানের দৃশ্যপট পুরোপুরি উল্টো।

বর্তমানে বৃহৎ এই ইকনোমিক জোনটিকে তৈরি করতে হাজারো শ্রমিক দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। এই চরে আগে যততুকু উচ্চতায় পানি উঠতো এখন তার দুইগুন উচ্চতায় মাটি ভরাটের কাজ চলছে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী নামের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটির আয়তন প্রায় ৩৫ হাজার একর। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪১ কিলোমিটার।
এই ইকনোমিক জোনটি যেসব বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে তারমধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং সন্দ্বীপ। পাশেই রয়েছে ফেনী সোনাগাজী উপজেলা এবং নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা। আয়তনের দিক থেকে পুরো এশিয়া জুড়ে আর একটিও নেই।

জানা গেছে, বৃহৎ এই ইকনোমিক জোনের কাজ শেষ হতে আরও ৬ বছরের মতো সময় লেগে যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে বিনিয়োগের হিড়িক পড়েছে মিরেরসরাইয়ের ইকনোমিক জোনে। যেখানে দেশি কোম্পানির চেয়ে বিদেশি কোম্পানির নামের তালিকাটিই বড়।

বড় নামের তালিকায় সবার উপরেই রয়েছে জাপানের হোন্ডা মটরস করপোরেশন। দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস কোম্পানি এসকে গ্যাস। সিঙ্গাপুরের ওয়েলমার। জার্মানের মার্সিডিজ ব্র্যান্ড, বিএমডব্লিউসহ চীনের নামকরা অন্তত হাফ ডজন কোম্পানি। পাশাপাশি এই ইকনোমিক জোনে বসুন্ধরা, এসিআই, বেক্সিমকোসহ বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো তো থাকছেই।

ইতোমধ্যে এই জোনের একশটিরও বেশি কোম্পানিকে প্রায় ৭ হাজার একর জায়গা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। আর তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব অর্থের পরিমাণ প্রায় ২১ বিলিয়ণ ডলারের কাছাকাছি।

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত কিংবা ভিয়েতনামে অসংখ্য স্পেশালাইজড ইকনোমিক জোন থাকতেও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকেই কেন বেছে নিয়েছেন তারা।

কারণ, এই ইকনোমিক জোনটি শুধুমাত্র একটি ইকনোমিক জোন নয়, রীতিমতো আগামী এক দশকের মধ্যে এটি হতে যাচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেগা সিটি।

এখানে তৈরি করা হচ্ছে একটি নৌবন্দর ও একটি বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। যেখানে ছোট বড় সব ধরনের জাহাজ ভিড়তে পারবে। এখানে হবে আধুনিক বিমানবন্দর। সেই সাথে নির্মাণ করা হবে ২০টির মতো পাঁচ তারকা হোটেল ও মোটেল। তৈরি হবে স্কুল কলেজও।

ব্যাংকিং লেনদেন সহজ করার জন্য এখানে সব ধরনের বাণিজ্যিক এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকের পূর্ণ অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। এছাড়া বেশকিছু অত্যাধুনিক হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন, বিমা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য স্থাপন হচ্ছে একাধিক পুলিশ স্টেশনও।

সড়ক যোগাযোগের ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো এতো ভালো যোগাযোগ সড়ক আর কোথাও নেই। এসব পরিকল্পনার কেন্দ্রেই রয়েছে ঢাকা-চ্ট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েটি। ইতোমধ্যে যার কাজ চলমান রয়েছে। সাথে বুলেন ট্রেন চালুর কথাটিতো সবারই জানা। এর সবগুলো যুক্ত হবে মিরসরাইয়ের সাথে।

এদিকে বিশেষ এই অর্থনৈতিন জোনটির অল্প কিছু দূরেই রয়েছে মাতাবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভারি মালবাহী জাহাজগুলো ভিড়তে পারবে এবং মিরসরাইয়ের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে।

আছে এশিয়ান হাইওয়ে এবং কক্সবাজারের মিরিন ড্রাইভ সড়কও। যেই সড়কগুলো সরাসরি যুক্ত হবে মিরসরাইয়ে। তাইতো সবার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়