ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ডিজিটাল বাংলাদেশে ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তাদের বিপ্লব

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ৪ মার্চ ২০২১  

অনলাইন ছবি

অনলাইন ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধায় ই-কমার্সের মাধ্যমে নগরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তাদের বিপ্লব ঘটেছে। রান্নাবান্নার কাজের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে অনলাইনে ব্যবসা করে সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখছেন এসব নারী উদ্যোক্তারা। ডিজিটাল বাংলাদেশে’র সুবিধাতে নারীদের এ বিপ্লব ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থা এখন অনেকটাই অনলাইন নির্ভর। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভা সেই নির্ভরতা পুরোপুরি প্রকাশ্যে এনেছে। এখন ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য বেচাকেনা করা যাবে। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন  নারী উদ্যোক্তারা। নিজেদের উৎপাদিত পণ্য  সরাসরি বাজারে বিক্রি না করে অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারছেন তারা। এতে বেকার ছেলেদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্যের নায্য দামও পাচ্ছেন। 

সফল নারী উদ্যোক্তা নাইচ আকতার; যিনি বগুড়া থেকে স্নাতক পাসের পর স্বামী সাজেদুর রহমানকে নিয়ে বাড়ির পাশের ২০ শতক জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। প্রথমে পেঁপে চাষ সঙ্গে হাঁস-মুরগি ও গাভি পালন শুরু করেন। আর পারিবারিকভাবে মা-খালার কাছে শেখা সেলাই ও হাতের কাজও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

নাইচ আকতার জানান, উৎপাদিত ফসল তার স্বামীর মাধ্যমে প্রথমে স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হতো। কিন্তু নায্য দাম পেতেন না। মূলত বাজারদর আগে থেকে না জানায় প্রায়ই কম মূল্য পেতেন।

এখন তার ভাষ্য, বাস্তবতা বদলেছে। এখন আর আমাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য স্বামীকে হাটে পাঠাতে হয় না। স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিজেই পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করি।

আত্মবিশ্বাসী নারী উদ্যোক্তা নাইচ আকতার বলেন, এখন আমাদের কাছ থেকে অনলাইন মার্কেট প্ল্যাটফর্ম পারমিদা, মার্কেট বাংলা, আবাদ, দারাজ বাংলাদেশ, ফুড ফর নেশনের মতো অন্যান্য কোম্পানি সরাসরি কৃষিপণ্য সংগ্রহ করছে।

শুধু নাইচ আকতারই নন, ই-কমার্সে রীতিমিতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন বগুড়ার আদমদিঘীর মাহমুদা আকতার, ময়মনসিংহের ভালুকার আসমা ইসলাম, বেবী রহমানসহ হাজারো নারী উদ্যোক্তা।

নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনাকালে অনলাইনে পণ্য বিক্রির যে অভ্যাস ও আস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে অন্যদেরও স্মার্টফোন, ই-কমার্সে আগ্রহ বাড়ছে। গ্রামের কৃষক ও নারীদের মধ্যে দিনদিন ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।

জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী উদ্যোক্তাদের সেলাই, কম্পিউটার, হাতের কাজসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে ই-কমার্সসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ তাদের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই সংস্থার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বগুড়ার গাবতলীর দুর্গাহাটা ইউপির মধ্যকাতুলী গ্রামের মাহমুদা আকতার। তিনি মূলত মুরগি পালনের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করেন এবং বেকার তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেন। তার খামারে ১ হাজার ৫০০ সোনালি জাতের মুরগি রয়েছে।

মাহমুদা আকতার বলেন, করোনার শুরুতে প্রায় মুরগি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। তখন ইন্টারনেটে অনলাইনভিত্তিক একটি ই-কমার্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে সহযোগিতা করে এবং আমার ফার্মের মুরগি বিক্রি হয়ে যায়। এরপর আর আমাকে বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, নিয়মিত অনলাইনে মুরগি, ডিমসহ হাতের কাজ করা পোশাক-পরিচ্ছদ, নকশিকাঁথাসহ নানা জিনিস বিক্রি করছি। দামও ভালো পাই, বিক্রি নিয়েও চিন্তা করতে হয় না।

ভালুকার হবিরবাড়ী ইউপির নারী উদ্যোক্তা আসমা ইসলাম। সফল সবজি চাষি হিসেবে এরই মধ্যে হবিরবাড়ী এলাকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। চাষের পাশাপাশি ক্ষেতের সবজি অনলাইনে বিক্রির কৌশলও শিখেছেন তিনি।

তিনি বলেন, অনলাইনের এত কিছু বুঝি না। করোনায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে বাড়িতে সারাদিনই ল্যাপটপ আর স্মার্টফোন নিয়ে বসে থাকে। আমার সবজি কম দামে স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছিল। এ সময় সেই আমাকে অনলাইনে বিক্রি করার বিষয়টি জানায়।

ছেলের কাছ থেকে নেয়া প্রশিক্ষণে এখন অনলাইন মার্কেটিংয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করে নিজের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করছি।  

আসমা জানান, তার উৎপাদিত লাউ, পেঁপে, কপি ঢাকার আগোরা, আবাদ ও দারাজের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করছেন।

এদিকে, বগুড়ার গাবতলীর  বেবী রহমান জানান, তিনি শুধু হাতের তৈরি নানা পণ্য ও নকশিকাঁথা অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করছেন। 

উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের শুরুর কথা জানিয়ে তিনি জানান, ২০১৬ সালে একশনএইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় ২৫ জন নারী নিয়ে তিনি গ্রামে একটি সমিতি করেন। এরপর সমিতির সদস্যরা চাষাবাদের স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। আগে তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় হাটে বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনা শুরু হলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি শুরু করেন।

এদিকে নাইচ আকতার বলেন, আসলে আমরা গ্রামের মানুষ। প্রযুক্তি বিষয়ে অতোটা জ্ঞান নেই। তবে আমাদের কৃষকদের জন্য এটা একটা সম্ভাবনাময় দিক। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনলাইনে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরো সহজ করলে বাজার বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামের নারীরা কৃষিপণ্য উৎপাদনে আরো উৎসাহী হবেন। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করি।

এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। নারীরা আজ আর ঘরে বসে নেই, তারা এখন সফল উদ্যোক্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীরা ই-কমার্স ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরো বলেন, আজ ই-কমার্সে নারীদের জয়জয়কার। দেশে যত অনলাইন ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আছে তার শতকরা ৮০ ভাগ পরিচালনা করছে নারীরা। তারা সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ এবং ব্র্যান্ডিং করার জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন গঠন করেছে সরকার। রাজধানীর ধানমন্ডিতে মার্চ মাসের মধ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশনের ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়