ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ক‌রোনা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২৪ নভেম্বর ২০২০  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও জ্যামাইকার মতো উপকূলীয় দেশগুলোকে। তার ওপর কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এই বৈশ্বিক মহামারির কারণে বিপাকে পড়েছে পর্যটননির্ভর প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোও। কোভিড-১৯ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অর্থনীতি সচল রাখতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো ডিজিটাল গ্রিন টেকনোলজি ইনফরমেশন হাব ও ডিজিটাল মার্কেট প্লেস চালুর মতো উদ্যোগ নিতে পারে।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস অ্যা গ্রিন অ্যান্ড রিজিলিয়েন্ট বিজনেস রিকোভারি’ বিষয়ক সেশনে আলোচনায় বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।

মঙ্গলবার ব্যবসায়ী‌দের শীর্ষ সংগঠন এফ‌বি‌সি‌সিআই‌ এক বিজ্ঞ‌প্তি‌তে এ তথ্য জানায়।

কমনওয়েলথের বিটুবি কানেক্টিভিটি ক্লাস্টারের অংশ হিসেবে ‘কানেক্টিং দ্য কমনওয়েলথ প্রাইভেট সেক্টর ফর অ্যা ডিজিটাল অ্যান্ড গ্রিন রিকভারি’ শীর্ষক ওয়েবিনারের অংশ হিসেবে এই সেশন আলোচনার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ওয়েবিনারটি আয়োজন করে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট। ‘টুওয়ার্ডস অ্যা গ্রিন অ্যান্ড রিজিলিয়েন্ট বিজনেস রিকোভারি’ বিষয়ক সেশনটি সঞ্চালনা করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপ‌তি শেখ ফজলে ফাহিম। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, প্যাসিফিক আইল্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান স্টিফেন লিয়ন, জ্যামাইকার ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড জব ক্রিয়েশন মিনিস্টার আওবিন হিল এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ ও বিনিয়োগ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামান্থা কোহেন সিভিও এই সেশনে আলোচনায় অংশ নেন।

তাদের আলোচনায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রাণবন্ত এবং টেকসই মডেল রূপান্তর এবং এই প্রক্রিয়ায় সরকারের সহায়তার বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া বেসরকারি খাতের পরিবেশবান্ধব পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় কমনওয়েলথের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়।

সেশনের শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপ‌তি শেখ ফজলে ফাহিম চলতি বছর আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতাই ছিল তার নেতৃত্বের ভিত্তি, যা কমনওয়েলথও অনুসরণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গৃহস্থালি পর্যায়ে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে আছে।

শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কোভিড-১৯ ছাড়াও বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১ হাজার ২১০ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তায় আমাদের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২৪ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে উঠেছে। ২০২১-২২ সালে আমরা কোভিড-পূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসার পরিকল্পনা করছি।

এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, কোভিড-১৯ দ্বারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে পর্যটন ও বিমান খাত। এ ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ অর্থ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবাদে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। কমনওয়েলথের অধীন ডিজিটাল গ্রিন টেকনোলজি ইনফরমেশন হাব চালুর সুপারিশ করেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরবর্তী নিউ নরমালে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিতে আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি ডিজিটালাইজ করা, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।

তিনি বলেন, আমরা জানি, এটা সবার জন্যই কঠিন সময়। তবে আমরা চাই, ব্র্যান্ডগুলো বিক্রয় আদেশের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতার দায়িত্ব আমদানিকারক দেশগুলোর সরকারের ওপরেই বর্তায়।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা পশ্চিমা দেশগুলোয় কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের দেশে কোভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম হলেও আমরা যেসব দেশে পণ্য বিক্রি করি, সেসব দেশের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত।

জ্যামাইকার ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড জব ক্রিয়েশন মিনিস্টার আওবিন হিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি ও কোভিড-১৯ মিলে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ সময়ে ই-কমাসের্র চাহিদা উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বেড়েছে। জ্যামাইকানরা অনলাইন নির্ভর ব্যবসায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা জ্বালানির চাহিদা পূরণে আরও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি চাই। প্যাসিফিক আইল্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান স্টিফেন লিয়ন বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশের জন্য পর্যটন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত। কোভিড-১৯ এর কারণে পর্যটন ভেস্তে গেছে। এতে আমরা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছি।

কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ এবং বিনিয়োগ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামান্থা কোহেন সিভিও বলেন, যুক্তরাজ্যে কিছু একটা ঘটলে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। এখন আমরা বুঝি যে, সবাই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, ডিজিটাল মার্কেট প্লেস তৈরি সবার জন্য উপকারী হবে। কারণ এটা টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে। মূল ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুক্তরাজ্যের রফতানি বিষয়ক মন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্ট, মালয়েশিয়ার যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া বিষয়ক মন্ত্রী দাতো সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপ‌তি সঙ্গীতা রেড্ডিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়