ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

`কোরবানি বিষয়ে জরুরি মাসআলা`

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪০, ৩১ জুলাই ২০২০  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্তেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫)।

ইবাদতের মূলকথা হলো আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে ধারাবাহিকভাবে কোরবানির কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ করা হল। আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব।

মাসআলা-১৬

সাত শরিকের কোরবানি:

সাতজনে মিলে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানিই সহিহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)।

মাসআলা-১৭

সাত শরিকের নিচে কোরবানি:

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েয। (সহিহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)।

মাসআলা-১৮

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে:

যদি কেউ আল্লাহ তায়অলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শরীক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯)।

মাসআলা-১৯

কোরবানির পশুতে আকীকার অংশ:

কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকীকা দুটোই সহিহ হবে। (তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২)।

মাসআলা-২০

শরিকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কোরবানি সহিহ হবে না।

মাসআলা-২১

কোরবানির পশু কেনার পর কাউকে শরিক করা যাবে?

যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরিক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরিক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে। (কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০)।

মাসআলা-২২

কোরবানির উত্তম পশু:

কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। (মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩)।

মাসআলা-২৩

খোড়া পশুর কোরবানি:

যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কোরবানি জায়েয নয়। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭)।

মাসআলা-২৪

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কোরবানি:

এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা  কোরবানি করা জায়েয নয়। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪)।

মাসআলা-২৫

দাঁত নেই এমন পশুর কোরবানি:

যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা জায়েয নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮)।

মাসআলা-২৬

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে:

যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কোরবানি জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কোরবানি করা জায়েয। (জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭)।

মাসআলা-২৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কোরবানি:

যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কোরবানি জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮)।

মাসআলা-২৮

অন্ধ পশুর কোরবানি:

যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কোরবানি করা জায়েয নয়। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪)।

মাসআলা-২৯

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে:

কোরবানির পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কোরবানিদাতা গরীব হলে (যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কোরবানি করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কোরবানি করলেই হবে। তবে দুটি কোরবানি করাই উত্তম। (সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭)।

মাসআলা-৩০

গর্ভবতী পশুর কোরবানি:

গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরূহ। (কাযীখান ৩/৩৫০)।

 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়