ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে অকৃত্রিম ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে স্যালুট পান বিক্রেতার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১৮ আগস্ট ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

‘আমি যেখানে দেখি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠান, সেখানেই ছুটে যাই। কেউ আমাকে ডাকুক আর না ডাকুক। সেই অনুষ্ঠানে পাগলের মতো ছুটে যাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি চোখে পড়লে নীরবে চোখ জুড়িয়ে তাকে দেখি’। 

কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার সমন্বয় পাড়ার শরিয়াতুল্লাহ ব্যাপারীর ছেলে পান দোকানদার মনির উদ্দিন (৫৮)। 

বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে স্যালুট দেয়ার দৃশ্য ক্যামেরা ধারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মনির উদ্দিন তার মনের মধ্যে লালন করা বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কথা জানান। 

মনির উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধা জানানোর মতো আমার কোনো সামর্থ নেই। তাই বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার শেখ ফজিলাতুননেছা দাখিল মাদরাসায় রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পাশে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধা জানালাম। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন স্ব-পরিবারে হত্যা করে তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। আমার বাবা শরিয়াতুল্লাহ ব্যাপারীর কাছে যখন শুনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে সেদিন থেকেই ৩ দিন দানাপানি খাওয়া বাদ দিয়েছিলাম। আমার কোনো কিছুই ভালো লাগেনি। 

মনির উদ্দিন বলেন, ১০-১২ বছর বয়সে থাকার সময় বাবা শরিয়াতুল্লাহ ব্যাপারীর কাছে বিছানায় শুয়ে কেচ্ছা (রূপ কথার গল্প) শুনতে চাইলে বাবা আমাকে অন্য কোনো গল্প না শুনিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সাহস সম্পর্কে গল্প শোনাতেন। 

বিশেষ করে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর যে নির্যাতন চালাতো সেসব কথা ও বাঙালির মুক্তির জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদ ও আন্দোলনের কথাগুলো থেকে বঙ্গবন্ধুকে ছোট থেকেই ভালোবাসতে থাকি। পরে স্বাধিনতা যুদ্ধের জন্য বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে বঙ্গবন্ধুকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলি। 

মনির উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্ব-চোখে দেখার আমার খুব ইচ্ছা ছিল। এই ইচ্ছার মধ্য থেকে একদিন জানতে পারি বঙ্গবন্ধু কুড়িগ্রামে মিটিং করতে আসবেন। এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে একাই প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটে কুড়িগ্রামে যাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখার ভাগ্য আমার হয়নি। কুড়িগ্রাম পৌঁছে জানতে পারি বঙ্গবন্ধু কুডিগ্রামে মিটিং করে ঢাকা রওনা হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে স্ব-চোখে না দেখতে পেলেও যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন তার ছবি দেখে মন জুড়িয়ে নিবো। বঙ্গবন্ধুর ছবির মাঝে আমার বাবাকেও খুঁজে পাই। 

মনির উদ্দিন আরও বলেন, আমার বাবাও বঙ্গবন্ধুকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। আমার বাবার কাছ থেকেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে শিখেছি। এজন্য বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখেই নীরবে বঙ্গবন্ধুকে ও আমার বাবাকে খুঁজে পাই। 

মনির উদ্দিন বলেন, আমার জীবন সংসার চলছে এখন ছোট্ট একটি পানের দোকানে। স্থানীয় কালিরহাট বাজারের দীপক সেন মোড়ের ক্ষুদ্র পানের দোকান থেকে দুই-একশো যা আয় হয় তা দিয়েই জীবন চলছে। এখনো বয়স্কভাতা পাইনি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমার এখনো কম বয়স থাকায় বযস্ক ভাতার কার্ড দেয়নি। তবে এ নিয়ে ক্ষোভ নেই। অন্য কেউ যদি বয়স্ক ভাতা পায় পাক তাতেই খুশি। কপালে যা আছে তা নিয়েই চলতে হবে আমাকে। বর্তমান ৩ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে আমার। স্ত্রী মারা গেছে। এর মধ্যে বড় ছেলে মিজানুর অনার্স পাস করার পর থেকে বেকার রয়েছে।

মেজ ছেলে নুর আলম এসএসসি পাস করে আর বেশিদূর লেখা পড়া করতে পারেনি। ছোট ছেলেরও মুকুলের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে। একমাত্র মেয়ে মনিরার বিয়ে দিয়েছি। 

মনির উদ্দিন আরো বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী মুজিব-ইন্দরা চুক্তির মাধ্যমে এখন বাংলাদেশি নাগরিক হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। 

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন এনেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবা বঙ্গবন্ধুর ছিটমহল বিনিময়ের ‘৭৪-এর মুজিব-ইন্দরা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে আজও ছিটমহল নামের কারাগারে বন্দি থাকতাম।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়