ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১৪ অক্টোবর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা লাগানোর কল্পে ১৩ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা কুমিল্লার পূজামণ্ডপে মূর্তির সঙ্গে কোরআন শরীফ রেখে দেয়। এরপর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে হিন্দুদের মন্দিরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা এমন ঘটনা ঘটায় শুধুমাত্র সরকারকে বিব্রত করার জন্য। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপির এমন রাজনীতি এবারই প্রথম নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল বিএনপি।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কুপ্রভাবে ভোলা জেলায় লাগে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবল। জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের নলগোড়া গ্রামের সাধু সিংয়ের বাড়িতে ছিল ছয়টি পরিবার যাদের প্রধান ছিলেন লক্ষ্মী নারায়ণ সিং। লক্ষ্মী নারায়ণ ১৯৯২ সালের পরে জমিজমা বিক্রি করে চলে যান। ১৯৯২ সালের পর থেকে হিন্দু পরিবারগুলো চলে যেতে শুরু করে।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন ২ অক্টোবর অষ্টাদশী গ্রাম্য গৃহবধূ জয়ন্তীর জীবনের নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। প্রথম সন্তান জন্মমুহূর্তে প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, ঠিক সে সময় দুপুর ৩টায় ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার সাত নম্বর পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। একাত্তরের বিভীষিকা যেন আবার নেমে আসে তিরিশ বছর পর। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এই যে, বিএনপি-জামায়াতের নরপশুরা তাদের হাজার বছরের প্রতিবেশী সেই অন্নদাপ্রসাদ গ্রামেরই অধিবাসী। কালকে যাদের চাচা বলে ডেকেছিল মেয়েরা তারাই আজ বিএনপি-জামায়াতের পতাকা উড়িয়ে এলো তাদের সম্ভ্রম লুট করতে। অন্তঃসত্ত্বা মাকে বাধ্য হতে হল ধানক্ষেতে সন্তান প্রসব করতে।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, স্থানীয় বিএনপি নেতা ইলিশা কান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর মাতবরের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দা, ছুরি, লাঠি ও বল্লমসহ তাদের কুঁড়েঘরে হামলা চালায়। হামলায় গ্রামবাসী ভয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। গ্রামের বিভিন্ন ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা হামলা চালাতে থাকে। জয়ন্তীর শাশুড়ি মুক্তিরানী একজন স্থানীয় ধাত্রীকে দিয়ে তার শিশু প্রসব করাচ্ছিল। শিশু প্রসবের মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা দা ও ছুরি দিয়ে জয়ন্তীর কুঁড়ে ঘরের বেড়ায় কোপ মারতে থাকে। ধাত্রী সন্ত্রাসীদের ভয়ে ও আতঙ্কে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন বাড়িতে যখন গণধর্ষণ চলছিল তখন সেই ঘরে শুধু অসহায় জয়ন্তী ও তার শাশুড়ি। সন্ত্রাসীরা তখনও ঘরের বেড়া ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ মুহূর্তে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান।

হতবুদ্ধি মুক্তিরানী কোন উপায় না দেখে জয়ন্তীকে ভালভাবে জড়িয়ে ধরে নবজাতককে পরনের শাড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে ঘরে নিয়ে অপর দিকের বেড়া ভেঙে জয়ন্তীকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনে। পরবর্তীতে ওই অবস্থায় দৌঁড়ে পালিয়ে ধানক্ষেতে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। সদ্যপ্রসূতা মা জয়ন্তীর তখন দৌড়ে পালানোর মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু মৃত্যু ভয়ে ভীত মুক্তি রানী তাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনও পর্যন্ত সদ্যজাত শিশুটিকে মায়ের নাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করার সময় পায়নি মুক্তি রানী। তাদের মতো অনেকেই সেই ধানক্ষেতের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উঁচু একটি জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় এসে জড়ো হয়েছিল। সেখানে একজনের কাছ থেকে একটি ব্লেড নিয়ে শিশুটির নাড়ি কাটে মুক্তি রানী। রাত নয়টা পর্যন্ত সেখানে থেকে সন্ত্রাসীদের চলে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করে তারা পুনরায় ঘরে ফিরে যায়। এ ঘটনার কারণে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখা হয় সংগ্রাম।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়