ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে মেঘনা পাড়ের চিত্র

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২২ অক্টোবর ২০২২  

উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে মেঘনা পাড়ের চিত্র

উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে মেঘনা পাড়ের চিত্র

নদী তীর সংরক্ষণ, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে মেঘনা পাড়ের চিত্র। ভাঙনরোধ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গ্রহণ করা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এতে পাল্টে গেছে এ অঞ্চলের সার্বিক চিত্র।

এক সময় মেঘনা পাড়ের হাজারো বাসিন্দার কাছে এ নদী ছিল আতঙ্কের নাম। মেঘনার করাল গ্রাসে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে একরের পর একর জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন মেঘনা নদী পাড়ের অনেক বাসিন্দা। সব হারিয়ে যারা নিজেদের কপাল পোড়া মনে করতেন তাদের জন্য আশীর্বাদ আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ভাঙনরোধে নিরলস কাজ শুরু করে সরকার। এতে হাসি ফুটতে শুরু করে নদী পাড়ের মানুষের মুখে।

লালমোহন উপজেলার ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মেঘনার ভাঙনে একাধিকবার বসতভিটা হারিয়েছেন তারা। তবে বর্তমান সরকারের আমলে সেই ভাঙন থেকে মুক্তি মিলেছে তাদের। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন তারা।

উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ইউনিয়নের দুই কিলোমিটারেরও অধিক স্থানে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনাসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, লালমোহনে মেঘনা নদীর পাড় রয়েছে ১৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের আমলে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ নয় কিলোমিটার ব্লকের কাজ ব্লক স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা। এছাড়া নদী ভাঙনরোধে এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এক হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে, যা ভোলার নদী ভাঙনরোধে এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে লালমোহনের মেঘনা নদী পাড়ের মানুষের আতঙ্ক চিরতরে ঘুচবে।

এ প্রকল্পের আওতায় লালমোহন ও তজুমদ্দিনের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ভাঙন কবলিত নদী তীর সংরক্ষণ, দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ পার্ক, সোলার স্ট্রিট লাইটসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য ১৯টি প্যাকেজে  কাজ হবে। তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর থেকে লালমোহন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩৪ দশমিক ৬৯০ কিলোমিটার নদী তীর, বেড়িবাঁধ উন্নয়নসহ কয়েকটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়িবাঁধের রাস্তা ২০ ফুট চওড়া করা হবে। নদী তীর সংরক্ষণের জন্য বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

এছাড়া লালমোহনের মঙ্গলসিকদার, গাইট্টা ও তজুমদ্দিনে তিনটি দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ পার্ক রয়েছে এ প্রকল্পে। এতে নদী তীর এলাকায় পর্যটকদের আগমন আরো বৃদ্ধি পাবে। জেলেদের নৌকা তীরে ভেড়ানোর জন্য নয়টি জেটি নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে নতুন সাতটি স্লুইস গেট নির্মাণেরও প্রস্তাবনা রয়েছে এ প্রকল্পে। পাশাপাশি পুরো ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ৩৪৭টি সোলার স্ট্রিট লাইট বসানো হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমোহনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন বলেন, নদী ভাঙন রোধে লালমোহন-তজুমদ্দিনে ব্যাপক কাজ হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে এসব এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই রোধ হয়েছে। এরই মধ্যে একনেক সভায় প্রায় ১১’শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, লালমোহনের ঐতিহ্যবাহী একটি খালের নাম বেতুয়া খাল। এক সময় এ খাল স্রোতস্বিনী ছিল। বড় বড় নৌকা চলত এ খাল দিয়ে। চলত ছোট ছোট যাত্রীবাহী লঞ্চ। কিন্তু কালের আবর্তে বেতুয়া খাল তার যৌবন হারিয়েছে। মরা খালে পরিণত হয়েছে বেতুয়া। বেতুয়া খালের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে ১৯ কিলোমিটার খাল খনন কাজ হবে এ প্রকল্পে। লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী ভাঙনরোধের জন্য ভোলায় এত বড় বরাদ্দ দিয়েছেন।

ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর দেখেছি মেঘনার ভাঙনে নি:স্ব হয়ে যাওয়া পরিবারের আহাজারি। মানুষের এমন চিত্র দেখে নদী ভাঙনরোধে কাজ শুরু করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় অনেকাংশেই নদী পাড়ের মানুষকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।

এমপি শাওন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। যতদিন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন ততদিন বাংলাদেশ তথা ভোলা জেলারও উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণেই লালমোহন-তজুমদ্দিনের বিভিন্ন চরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে লালমোহন-তজুমদ্দিনের শিক্ষার মান, স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়