ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ইবরাহিম (আ.)-এর জীবন থেকে ১০ শিক্ষা

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৫ জুলাই ২০২২  

আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-কে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দান করেছিলেন। হজ ও কোরবানির বিধান দানের মাধ্যমে পৃথিবীতে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইবরাহিম (আ.)-কে মুসলিম জাতির পিতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বর্ণনা করা হয়েছে তাঁর বিশেষ মর্যাদা।

তাঁর জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে, যাতে আছে পরবর্তী মানুষের জন্য শিক্ষা।
ইবরাহিম (আ.)-এর বিশেষ মর্যাদা : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে বিশেষ কিছু মর্যাদা দান করেছেন, যা অনেক নবী ও রাসুলকে দান করা হয়নি। যেমন—

১. বংশধরদের নবুয়তের জন্য নির্বাচন : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধরদের নবুয়তের জন্য মনোনীত করেন। এ জন্য তাঁকে বলা হয় ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীদের পিতা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইবরাহিমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবুয়ত ও কিতাব। আমি দুনিয়ায় তাকে পুরস্কৃত করেছিলাম; আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবে। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২৭)

২. বন্ধুত্বের মর্যাদা : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে বন্ধুত্বের মর্যাদা দান করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ইবরাহিমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৫)

৩. চির অনুসরণীয় : মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে চির অনুসরণীয় করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য ইবরাহিম ও তার অনুসারীদের মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ। ’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৪)

জীবন থেকে শিক্ষা : আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনে আছে মুমিনের জন্য বহু শিক্ষণীয় বিষয়। এমন ১০টি শিক্ষা নিম্নে তুলে ধরা হলো—

১. সত্যের অন্বেষণ : ইবরাহিম (আ.) কৈশোর থেকেই সত্যান্বেষী ছিলেন। আল্লাহর নিদর্শন দেখে তিনি আল্লাহর পরিচয় লাভ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হতে দেখল, তখন বলল, এটা আমার প্রতিপালক, এটা সর্ববৃহৎ। যখন এটাও অস্তমিত হলো, তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক করো তার সঙ্গে আমার কোনো সংস্রব নেই। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৭৮)

২. আনুগত্যে একনিষ্ঠ : আল্লাহর আনুগত্যে ইবরাহিম (আ.) ছিলেন একনিষ্ঠ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফেরাচ্ছি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৭৯)

৩. দ্বিনকে অগ্রাধিকার : ইবরাহিম (আ.) সব কিছুর ওপর দ্বিনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। দ্বিনের স্বার্থে তিনি ঘোষণা করেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক করো তার সঙ্গে আমার কোনো সংস্রব নেই। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৭৮)

৪. দ্বিনের দাওয়াত : ইবরাহিম (আ.) সত্যের দিশা লাভের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার-পরিজনকে দ্বিনের পথে আহ্বান জানান। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, ইবরাহিম তার পিতা আজরকে বলেছিল, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৭৪)

৫. ঈমান রক্ষায় দেশত্যাগ : ইবরাহিম (আ.) তাঁর ঈমান রক্ষায় দেশত্যাগ করেন। পঞ্চম হিজরিতে সাহাবায়ে কিরাম যখন হাবশায় হিজরত করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘ইবরাহিম ও লুত (আ.)-এর পর আল্লাহর পথে এরাই প্রথম হিজরতকারী দল। ’ (খাতামুন-নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা ৩৬০)

৬. মসজিদ আবাদ করা : আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে বায়তুল্লাহ শরিফ আবাদ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন কাবা ঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ করো। এবং ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য আমার ঘরকে পবিত্র রাখার আদেশ করেছিলাম। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৫)

৭. দ্বিনের জন্য আত্মত্যাগ : ইবরাহিম (আ.) বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর আল্লাহ তাঁকে পুত্র ইসমাঈলকে দান করেন। কিন্তু আল্লাহর ঘর আবাদ রাখার জন্য এক অনুর্বর প্রান্তে তিনি তাঁদের ছেড়ে যান; এমনকি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় পুত্রের গলায় ছুরি চালান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের কাছে। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৭)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে—এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি। ’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০৩-১০৫)

৮. সন্তানদের জন্য দোয়া করা : পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের জন্য দোয়া করা ইবরাহিম (আ.)-এর শিক্ষা। তিনি দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি এ স্থানকে নিরাপদ নগর করুন। এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের ফলমূল দ্বারা জীবিকা প্রদান করুন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৬)

৯. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা : ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৯)

১০. আল্লাহর নির্দেশ পালন : ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ পালনে ছিলেন দ্বিধাহীন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তার প্রতিপালক তাকে বললেন, আত্মসমর্পণ করো, সে বলল, আমি জগত্গুলোর প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩১)

আল্লাহ সবাইকে সত্যের অনুসারী করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়