ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস আজ

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ৯ জুন ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

৯ জুন, আজ আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস। আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সর্বোচ্চ বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভস বা সংক্ষেপে আইসিএ ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি উদযাপন করে আসছে। আর্কাইভস দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 

২০০৪ সালে ভিয়েনায় আইসিএ তার ১৫তম কংগ্রেসে আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। পরে ২০০৭ সালে আইসিএ তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় ৯ জুনকে আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। আর সেটি বেছে নেয়া হয় ৯ জুন। কারণ, ১৯৪৮ সালের ওই দিনে জাতিসংঘের (ইউনেস্কো) পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিএ গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে সারা বিশ্বে ৯ জুন আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভা, সেমিনার, র‌্যালি, বক্তৃতা, বিবৃতি ইত্যাদির সাহায্যে দিনটি উদযাপিত হয়।

একটি জাতির অতীতের সব কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষর আর্কাইভসে সংরক্ষিত থাকে। এসব সংরক্ষিত নথি সরকার বা সরকার বহির্ভূত সংস্থা ও ব্যক্তিকে নিকট ও দূর অতীতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করে। অতীতের এসব তথ্য বর্তমানকে অনুধাবন আর ভবিষ্যৎকে পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এত বিশ্ব দিবস থাকতে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা দিবস কেন? উত্তর খুব সহজ। বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জ্ঞানের আধার হিসেবে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখলেও আর্কাইভসের বিষয়ে বলতে গেলে অজ্ঞ। অনেকের ধারণা, আর্কাইভসের নথিপত্র শুধু ইতিহাসবিদদের ব্যবহারের জন্য। আবার অনেকের ধারণা, এ থেকে সেবা নেয়া খুব জটিল। এমনকি যারা নিয়মিতভাবে নথি সৃষ্টি ও সংরক্ষণ করছেন, তারাও এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। এই ভ্রান্ত বা অস্বচ্ছ ধারণা প্রতিটি সংস্থার আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনাকে আরো জটিল করে তুলছে।

এটি বোঝা বেশ জরুরি যে প্রতিটি নথির সৃষ্টি হয় সংস্থা বা ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের সাক্ষ্য বা তথ্যসংশ্লিষ্ট দলিল হিসেবে। সৃষ্ট নথির একটি অংশ তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য সৃষ্টি হলেও এর বড় একটি অংশ ভবিষ্যতের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষার প্রয়োজনে সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ কারণেই জন্ম নেয় আর্কাইভস। 

আর্কাইভসের জন্ম হয় জাতি বা সমাজের ঐতিহ্যের ধারক ও তথ্যের ভান্ডার হিসেবে। তাই আর্কাইভসে রক্ষিত তথ্যের বৈচিত্র্য গুরুত্বের দিক দিয়ে অপরিসীম। আর্কাইভস একটি জাতির অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজ বিকাশের সাক্ষ্য বহন করে। আর্কাইভস তথ্যের বিশ্বাসযোগ্য উৎস, যা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ভিত্তি নির্মাণ করে। আর্কাইভস ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্মৃতিরক্ষা এবং সংগঠনের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। আর্কাইভসে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার মানবসমাজ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করে, গণতন্ত্রকে সচল রাখে, নাগরিকদের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখে এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে।

উন্নত বিশ্বে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, তারপরও তারা এর পক্ষে অবিরাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে বাংলাদেশে নথি সংরক্ষণের অবস্থা বেশ নাজুক অথচ সচেতনতার স্তর অনেক নিচে। বেশির ভাগ কার্যালয়ে নথি সংরক্ষণের যথাযথ কোনো স্থান নেই, নেই কোনো দক্ষ জনবল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন নথিগুলো সব বিনষ্ট বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে আর স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে খুব শিগগির জাতি ইতিহাসশূন্য হয়ে পড়বে আর প্রশাসনে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে।

তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এবং সর্বসাধারণকে তথ্যের সর্বাধিক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন আর্কাইভস ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলা। এজন্যই আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবসকে উপলক্ষ করে আর্কাইভস ও নথি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।

আর্কাইভসের গুরুত্ব জনগণকে সঠিকভাবে বোঝাতে না পারলে ইতিহাসের সংরক্ষিত দলিল-দস্তাবেজ ‘ধূলিধূসর হয়ে পড়ে থাকবে’ বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রী অভিযোগ করেন, নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দপ্তরের দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভসে দেয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ দপ্তর তা করছে না।

এগুলো দিলে আর্কাইভস আরো সমৃদ্ধ হত। আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পরে এ ডকুমেন্টগুলোর অসাধারণ মূল্য হবে। ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান গবেষণায় আর্কাইভসের ‘বড় ভূমিকা’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরানো নথিপত্রগুলোকে স্ক্যান করে তার রেপ্লিকা সংরক্ষণ ও সফট কপিগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি প্রাপ্ত ডকুমেন্টগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য একটি আধুনিক প্রকল্প শুরু করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আর্কাইভস ভিজিট কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়