ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আগামী ৩১ অক্টোবর ক্যাসিনো সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

৫৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডের অন্যতম হোতা সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন।

এদিন আসামি সেলিমকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আইনজীবী শাহিনুর রহমান আসামি সেলিমকে নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছিল। এই উপ-পরিচালকই মামলাটি তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত তার নামে মোট ৫৭ কোটির বেশি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছেন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ও জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড প্রিন্টিং পেপার্সের মালিক সেলিম প্রধান।

জানা যায়, দুর্নীতির মাধ্যমে ও ক্যাসিনো খেলে সেলিম প্রধান মোট ৫৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার। ক্যাসিনো খেলে অর্জিত ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাচার করেছেন থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে।

সেলিম জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং পেপার্সের চেয়ারম্যান। এই কোম্পানিতে তার ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৬৯ হাজার শেয়ারের বিপরীতে এখানে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ৬৯ লাখ টাকা। তবে সেলিম প্রধানের নামে শেয়ার মানি ডিপোজিট পাওয়া গেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫০ টাকা। এই টাকা তিনি অর্জন করেছেন অবৈধভাবে। প্রিন্টিং পেপার্স কোম্পানি ২০১০ সালে মুনাফা করে ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৩ টাকা। ২০১১ সালে মুনাফা করে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৭২ টাকা। এখান থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা ঋণ নেন বলে সেলিম প্রধান তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। তবে এই কোম্পানি থেকে কীভাবে ঋণ গ্রহণ করেছেন এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র নেই তার কাছে।

তার আয়কর নথিতে ২০১০-২০১১ সাল থেকে এফডিআর ও সেভিং সার্টিফিকেটে মোট ৬ কোটি ৮৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। এই অর্থ উপার্জনের বৈধ কোনো উৎস উল্লেখ করা হয়নি। ২০১২-১৩ করবর্ষে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনায় নতুন করে ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। এই টাকার উৎস উল্লেখ করা হয়নি। সেলিম প্রধানের ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর নথিতে প্রদর্শিত মোট ১১ কোটি ৩১ লাখ ৭৭ হাজার টাকার বৈধ কোনো উৎস না থাকায় ওই অর্থ অবৈধ উপায়ে অর্জন করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সেলিম প্রধানের ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে নিট সম্পদ ছিল ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার। এর মধ্যে তার নামে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি কেনা বাবদ ২০ লাখ টাকা ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগ, এফডিআর, সঞ্চয় সার্টিফিকেটসহ অস্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ ১১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার।

তদন্তে সেলিমের নামে মোট ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। অবশ্য আয়কর নথিতে তা দেখানো হয় ২০ লাখ টাকা। এই ২০ লাখ টাকাকে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হলে তিনি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সেলিম প্রধানের হিসাবে জমা রয়েছে মোট ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এই টাকা উপার্জনের বৈধ কোনো উৎস নেই। আয়কর নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেলিম প্রধানের নামে ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে। তদন্তে অনলাইন ক্যাসিনোর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যাবলী ও রেকর্ডপত্র অনুসারে প্রায় ১৩ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। দুদকের তদন্তে দেখা যায়, সেলিম প্রধান ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা দেশের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অর্জন করে পাচার করেছেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৫৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়