শেরপুরের সূর্যদী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২০ বুধবার

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

শেরপুরে ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার সূর্যদী এ আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সূর্যদী যুদ্ধ ও গণহত্যা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওয়ালীউল হাসান।

সূর্যদী যুদ্ধ ও গণহত্যা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এম এ হাসেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড শেরপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক হুইপ কন্যা ডা.শারমিন রহমান অমি, শহীদ পরিবারের সন্তান শেরপুর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, কামারিয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সূর্যদী এ আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ইশতিয়াক হোসেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোক্তাদিরুল ইসলাম, এনডিসি মিজানুর রহমান, মডেল গাল্স স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপন সারোয়ার, আতিউর রহমান মডেল গার্লসের প্রধান শিক্ষক জোবাইদুল হক, সূর্যদী এ আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান, শেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল আলম ভূইয়া সমাজসেবক উজ্জল আলমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভার শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৪৯ জন শহীদদের স্মরণে জেলা প্রশাসক ও সূর্যদী হত্যা ও গণহত্যা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তাদের স্মরণে ১মিনিট নীরবতা পালন করেন অতিথিরা। পরে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে উপহার সামগ্রী হিসেবে একটি করে শাড়ি ও লুঙ্গি দেওয়া হয়।

কি ঘটেছিল সেদিনঃ সে দিন সকাল ৮টা। শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নে ছায়া সুনিবিড় শান্ত গ্রাম সূর্যদী। ওইদিন গ্রামবাসীরা কেউ বাড়ির উঠানে শীতের মিষ্টি রোদ পোহাচ্ছেন, আবার কেউবা কৃষিকাজ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত। ওই সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলবদর প্রধান কামারুজ্জামানের নির্দেশে স্থানীয় রাজাকারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিপ আর ট্রাক বোঝাই পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী গ্রামটিতে হামলা করে। লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনী ছুড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। এক সময় রক্তের নেশায় উন্মুখ হিংস্র হায়েনাদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে নিজেদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ওই দিন আত্মগোপনে থাকা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মাত্র ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘গিয়াস কোম্পানি’র মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী, আবদুল খালেক, ফজলুর রহমান, হাবীবুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন ও আবুল হোসেন সামনে এগিয়ে যান। যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে পাক সেনারা।

এদিকে স্কুল মাঠে লাইনে দাঁড় করানো নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেয় পকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা। ঠিক ওই সময়ে গ্রামের একটি ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন দূর থেকেই ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। ওই সময় পাকবাহিনীরা লাইনে দাঁড় করানো লোকদের ফেলে রেখে ছুটে যায় ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্ধানে। পরে পার্শ্ববর্তী খুনুয়া চরপাড়া গ্রামের ওই মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিনকে সূর্যদী গ্রামের একটি ধানক্ষেতে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই সাথে শহীদ হয় গ্রামের মোট ৪৯ জন নিরীহ গ্রামবাসী। এজন্য ২৪ নভেম্বর শেরপুরবাসীর কাছে এক ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন।