আখাউড়া-কসবায় বিএনপির প্রতিপক্ষ বিএনপি

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৪:৫১ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-কসবা উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে পড়ছে। গ্রুপিংয়ের কারণে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দুই উপজেলা বিএনপির রাজনীতি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ কবির আহমেদ ভূঁইয়া সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আসেন। এরপর থেকেই দুই উপজেলার বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। কবির আহমেদ ভূঁইয়া এসেই কসবা ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ শুরু করেন। দলের মনোনয়ন, কমিটি গঠন, নেতা-কর্মীদের পদ পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে দলে আলাদা বলয় সৃষ্টি করেন। তবে দলে নেই কোনো তার পদ, রাজনীতির মাঠেও নেই সক্রিয় অংশগ্রহণ।

বর্তমানে কবির আহমেদ ভূঁইয়ার ইশারায় চলছে আখাউড়া ও কসবা উপজেলা বিএনপির একটি করে গ্রুপ। তবে তার হস্তক্ষেপে নাখোশ তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে গভীর হতাশা। এ কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না দুই উপজেলার অসংখ্য বিএনপি নেতা-কর্মী। গ্রুপ তৈরি হওয়ায় আখাউড়া-কসবায় নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে জেলা ও উপজেলার নেতাদের।

কবির আহম্মেদ ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউপির বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক। তার ছোট ভাই আবদুর রহমান সানি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত সচিব। ছোট ভাইয়ের দাপটেই হঠাৎ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন কবির আহম্মেদ ভূঁইয়া। এরপর দলের মনোনয়ন, কমিটি গঠন, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ সব বিষয়ে নাক গলাতে শুরু করেন। তার এসব কার্যক্রম ভালো চোখে দেখছে না আখাউড়া-কসবা বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন- সেটি নিয়ে দলে চলছে গ্রুপিং-লবিং। সম্প্রতি সেটি আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দলীয় কর্মকাণ্ডে কবির আহম্মেদ ভূঁইয়ার হস্তক্ষেপের কারণে দুই উপজেলা বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতা নাসির উদ্দিন হাজারী। আরেক পক্ষকে চালাচ্ছেন কবির আহমেদ ভূঁইয়া ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন।

আরো জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই কবির ও তার ভাই সানির আখাউড়া-কসবা উপজেলা বিএনপিতে প্রভাব খাটাতে শুরু করে। ওই নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতা নাসির উদ্দিন হাজারী ও আখাউড়া বিএনপির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন মনোনয়ন পান। মুসলিম উদ্দিন মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে মূল কারিগর সানি- এমনটাই প্রচার করতে থাকেন কবিরের সমর্থকরা। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে মুসলিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মূলত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই লাইমলাইটে আসেন কবির। এরপর থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়া বিএনপি পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।

বিএনপির রাজনীতিতে কবিরের হস্তক্ষেপকে অযাচিত বলে আখ্যায়িত করেছেন দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে তারা লিখিত অভিযোগও করেছেন। অভিযোগে ছোট ভাই সানির দাপট দেখিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কবির বিভিন্ন কমিটি করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে কবির আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, বিএনপিতে আমার কোনো পদ না থাকলেও জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে একজন কর্মী হয়ে রাজনীতি করছি। দলীয় কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। গঠনতন্ত্রের বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড করিনি। সাংগঠনিক কাজে গতি ফিরিয়ে আনতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উৎসাহিত করছি।

আখাউড়া-কসবা উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, কবির কখনো বিএনপির রাজনীতিই করেননি। দলের কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি হঠাৎ এসে বিএনপিতে খবরদারি করছেন। নেতা-কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে দুটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। যা কখনো মেনে নেয়া হয়নি। ছোট ভাই সানি তারেক রহমানের একান্ত সচিব হওয়ায় তিনি দাপট দেখিয়ে কলকাঠি নাড়ছেন।

আখাউড়া-কসবা বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা জানায়, দুই উপজেলায় বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান ছিল। বড় বড় নেতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল জনপদ। কিন্তু এখন আর সেই দাপট নেই। দলে বিভক্তির কারণে অনেকটাই গতিহীন হয়ে পড়েছে আখাউড়া-কসবা বিএনপির রাজনীতি। কবির আহম্মেদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ না করলে দলের বড় ক্ষতি হবে।

আখাউড়া পৌর বিএনপির সভাপতি বাহার মিয়া বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নাসির উদ্দিন হাজারী, মুশফিকুর রহমান ও মুসলিম উদ্দিন প্রার্থী হয়েছিলেন। মুশফিকুর রহমান ও মুসলিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আর নাসির উদ্দিন হাজারীর মাঠে আসার কোনো পরিবেশ ছিল না। এরপর থেকেই আমাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ হয়ে যায়। একটি মুশফিক-হাজারী গ্রুপ, আরেকটি কবির-মুসলিম গ্রুপ। পৌর বিএনপি-উপজেলা বিএনপির সমস্ত নেতারা একসঙ্গে। কিন্তু মুসলিম উদ্দিন আলাদা প্রোগ্রাম করেন। এটার পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কবির।

কসবা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম বলেন, যে কবিরের ব্যাগ টানে তাকেই পদ দিচ্ছে। তার ভয়ে সবাই অস্থির। অথচ বিএনপিতে তার কোনো পদ নেই। সে নিজেকে কসবা-আখাউড়া বিএনপির কাণ্ডারি দাবি করে। দলের হাইকমান্ডকে আমরা একাধিকবার বিষয়গুলো জানিয়েছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, দলে প্রতিযোগিতা থাকবে- এটাই বাস্তব। বিএনপি অনেক কঠিন ও ব্যতিক্রম। কে গ্রুপিং করছে, না করছে সেটি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা গ্রুপিং বুঝি না, বিএনপি এখন এক আছে।