জাহাজ রফতানিতে নবদিগন্ত

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:২৬ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার

জাহাজ রফতানিতে নবদিগন্ত

জাহাজ রফতানিতে নবদিগন্ত

বর্তমান সরকারের দূরদর্শিতায় খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। জাহাজ রফতানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে খুলনা শিপইয়ার্ড। প্রায় ৬৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি আশির দশকে লোকসানের মুখে পড়ে। ১৯৯৯ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিপইয়ার্ডকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করেছে ৪৩ দশমিক ২২ কোটি টাকা।

এখন বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে জাহাজ আমদানি করতে চাইছেন। বিগত কয়েক বছরে দেশের শিপইয়ার্ডগুলো ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে ৪০টি জাহাজ রফতানি করেছে। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জাহাজ যুক্তরাজ্যে রফতানি করা হয়েছে। ফলে দেশের অন্য উদ্যোক্তারাও জাহাজ শিল্পে নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

জাহাজ নির্মাণে অনুকূল পরিবেশ থাকায় উদ্যোক্তাদের এ খাতে নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পও বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে গত এক দশকে এ খাতের রফতানিও বেড়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং জাহাজ নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি, ৭০ শতাংশ কার্গো এবং ৩৫ শতাংশ যাত্রী নৌপথে পরিবাহিত হয়, যা দেশের অভ্যন্তরে জাহাজের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি করেছে। দেশে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০০ শিপইয়ার্ড রয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান রফতানিযোগ্য জলযান তৈরি করে। বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ খাতে প্রায় তিন লাখ মানুষ জড়িত। অভ্যন্তরীণ বাজার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে এবং রফতানি বাজার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ হারে বাড়ছে।

দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্মিত নৌযানের মধ্যে রয়েছে এমপিভি, কন্টেইনার, বাল্কার, ট্যাঙ্কার, ড্রেজার, টাগ এবং যাত্রীবাহী ফেরি। বাংলাদেশের জাহাজ শিল্প ২০১৮ সাল থেকেই বৈশ্বিক বাজারে আবারো অবস্থান ফেরাতে শুরু করে। ইউরোপের বাজারে পরিবেশবান্ধব জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ রফতানিতে নতুন অর্ডার আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশও এখন পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ করছে। ২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রথম জাহাজ রফতানি শুরু হয়। এরপর মাত্র দুই বছরে বিভিন্ন দেশে ১১টি জাহাজ রফতানি হয়।

বর্তমানে বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলো সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোর দিচ্ছে। সমুদ্র থেকে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সামুদ্রিক নবায়নযোগ্য শক্তি, সামুদ্রিক পর্যটন, সমুদ্র নিরাপত্তা ও গবেষণা ঘিরে কর্মযজ্ঞ বাড়ছে। সেজন্য উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত ছোট-বড় জাহাজ সমুদ্র অর্থনীতির এসব কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজন।

এরই মধ্যে জাহাজ ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর বিশ্ববাজারেও ব্যাপক হারে বেড়েছে জাহাজের চাহিদা। দেশে রফতানিকারকরা এর সুফল পাচ্ছে। নতুন অর্ডার মিলছে। পাশাপাশি সরকারও এ খাতের রফতানি বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রফতানিকারকদের নগদ সহায়তা, কর ছাড়সহ নানা প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এ খাতে ব্যাংকগুলোও মোটা অঙ্কের অর্থায়ন করেছে। একটি নীতিমালাও করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে। এতে প্রত্যাশা করা হচ্ছে জাহাজ রফতানি থেকে বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় হবে।

সূত্র জানায়, জাহাজ রফতানি থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ এক কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করে। বিশ্ববাজারে সম্ভাবনা থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক কোটি ৮০ লাখ ডলার ধরা হলেও তখন রফতানিকারকরা কোনো জাহাজই রফতানি করতে পারেনি। এরপর আবার ঘুরে দাঁড়ায় জাহাজ রফতানি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় জাহাজের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। এদিকে, ইরান ও ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে জাহাজ আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংয়ে ঐ আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, জাহাজ নির্মাণ শিল্প সম্ভাবনাময় খাত। অত্যাধুনিক জাহাজ নির্মাণে আমাদের দক্ষতা রয়েছে। প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে এ শিল্প তৈরি পোশাক শিল্পের কাছাকাছি রফতানি আয় অর্জন করতে পারবে। এ খাতকে এগিয়ে নেয়া জরুরি। সরকারও গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। চট্টগ্রাম, মাতারবাড়ি, মোংলা, পায়রাসহ সব বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।