পাতালরেলের কাজ শুরু

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০২:৫৩ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার

পাতালরেলের কাজ শুরু

পাতালরেলের কাজ শুরু

পাতালরেলের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। দেশের প্রথম পাতাল মেট্রো লাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে আয়োজিত সুধী সমাবেশ থেকে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রো রেল ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তিনি।

এর মধ্য দিয়ে স্মার্ট পরিবহনের যুগে পা রাখল বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে এই রেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে ২০২৬ সালে। এ পথে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। ঢাকার যানজট নিরসনে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২৬ সাল নাগাদ এই রেলরুট চালু হলে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। এখন বাসে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে গড়ে সময় লাগে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা, আর পাতাল রেল চালু হলে লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট। পাতালরেলের ডিপো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা পাতালরেলের কাজের উদ্বোধন করলাম। এর আগে আপনাদের উড়াল মেট্রো রেল উপহার দিয়েছি। এটা ওপর দিয়ে যাচ্ছে, এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে পাতালরেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো। মেট্রো রেলের সবচেয়ে বড় দিক হলো, এতে পরিবেশ দূষিত হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এক দিনে ১০০টি সেতু, ১০০টি সড়ক উদ্বোধন আগে কেউ করতে পারেনি। এর আগে রূপগঞ্জের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানোর পরই এমআরটি-১ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি মূলত দ্বিতীয় মেট্রো রেল ও প্রথম পাতালরেল। প্রধানমন্ত্রীর এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। হলুদ, কমলা, নীলসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপ ও গেঞ্জি পরিহিত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা বর্ণিল রূপ ধারণ করে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর জমায়েতে সুধী সমাবেশ শেষ পর্যন্ত জনসভায় রূপ নেয়। যার তথ্য খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া সুধী সমাবেশের বাইরেও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতাকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাতালরেল নির্মাণকাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের সময় উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অ্যাসোসিয়েশন (জাইকা) প্রধান তোমোহিদি ইচিগুচি। এ ছাড়া সুধী সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই ও বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দীন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি এ কে এম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। পাতালরেলের এমআরটি লাইন-১ বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো অংশ নির্মিত হবে মাটির নিচ দিয়ে। প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী এমআরটি লাইন-১-এ ১২টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনে বিরতিসহ পাতালরেলে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। অন্যদিকে সাতটি স্টেশনে বিরতিসহ নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড। এ ছাড়া নতুনবাজার ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে ১৬টি স্টেশনে বিরতিসহ পূর্বাচল থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। এটিই দেশের মেট্রো রেলের প্রথম পাতাল যাত্রা। এ পথে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এ পাতালরেল নির্মাণে ব্যয় হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এতে জাপানি ঋণ থাকবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প সূত্র জানায়, দ্বিতীয় মেট্রো রেল হবে উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে। দুটি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই রুটে মাটির নিচ দিয়ে চলবে রেল। এটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট। এই রুটে স্টেশন হবে মোট ১২টি। এগুলো হচ্ছে- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। আর পূর্বাচল রুটে নতুনবাজার স্টেশনটি হবে পাতালে। এরপর নতুনবাজার থেকে পূর্বাচলের নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। এ রুটে আবার স্টেশন হবে ৯টি। এগুলো হচ্ছে- নতুনবাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউসিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো। পাতালরেল হচ্ছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায়। এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ছয়টি মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে শেষ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রো রেল এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্য দিয়ে বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্নের মেট্রো রেলের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এ রুটে এখন নিয়মিত মেট্রো রেল চলছে।