‘তোমার জন্য রোজ গলা ফাটাই’

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:২২ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার

‘তোমার জন্য রোজ গলা ফাটাই’

‘তোমার জন্য রোজ গলা ফাটাই’

নেইমার কাঁদছেন। কাঁধে হাত রেখে কাঁদছেন রিচার্লিসন। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে গ্যালারি। স্বপ্নটা এইভাবে নষ্ট হবে? আর একটু গেলেই হয়তো ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হয়ে যেতো। কিন্তু সেটা হলো কই? এবারও হলো না! অভিমান করে ঈশ্বরকে হয়তো তাই বলছেন নেইমার জুনিয়র।

পেনাল্টি স্পট থেকে নেইমারের শটটা পোস্টে লাগার পরেই হতাশায় মাটিতে বসে পড়লেন মার্কুইনোস। মুখ লুকোলেন ঘাসে। ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ তখন মাঠের একটি প্রান্তের দিকে দৌড়াচ্ছেন। তার পিছনে পিছনে ক্রোয়েশিয়ার বাকি ফুটবলাররা।

সেদিকে অবশ্য কারোর নজর ছিল না। চোখ তখন হলুদ জার্সিধারীদের দিকে। না হলো না। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের এক্সট্রা টাইমে গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি ব্রাজিলের ‘পোস্টার বয়।’

তিনি ট্র্য়াজিক নায়ক। বিশ্বকাপ স্পর্শ করতে পারলেন না অলিম্পিক্সের সোনার পদক জয়ী। তবে তিনি পেরেছেন ইতিহাস লিখতে। জাতীয় দলের জার্সিতে ১২৪ ম্যাচ খেলে পেলের ৭৭ গোলের মাইলস্টোন স্পর্শ করেছেন পিএসজির স্টার। পেলের অবশ্য এই কীর্তি গড়তে লেগেছিল ৯২ ম্যাচ।

পেলেকে স্পর্শ করার দিনেই অবশ্য কেঁদে ভাসাতে হল। এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। ৩১ বছরের নেইমারের কাছেও তো সময় কমে আসছে। কে বলতে পারে এটা তারও শেষ বিশ্বকাপ নয়। কাপ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মরিয়া হয়েই। আরো একবার ঠোক্কর খেতে হলো শেষ আটে এসে।

এসেছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। অথচ সেই স্বপ্ন থেমে গেল কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চেই। ২০১৪ সালের সেই দিনটার কথা মনে আছে! কলম্বিয়ার বিপক্ষে ইনজুরি হয়ে মাঠ ছাড়লেন নেইমার। তারপ আবারও ফিরলেন ২০১৮ সালের পর জীবনের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেললেন নেইমার।

তবে ২০২৬ বিশ্বকাপে তাকে হয়তো আর দেশের জার্সিতে নাও দেখা যেতে পারে। বিশ্বকাপে খেলার আগেই নেইমার তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে দিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কাতারে আমি শেষ বিশ্বকাপ মনে করেই খেলব। আমি এই নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলব।

তিনি আরো বলেছিলেন, আমাদের সবসময় ফুটবল নিয়ে কথা হয়। আমি প্রতিটি ম্যাচই শেষ ম্যাচ মনে করে খেলব। কারণ কেউ জানে না কাল কী হবে। আমি পরের বিশ্বকাপে খেলব কিনা, সে ব্যাপারে কোনও গ্যারান্টি দিতে পারছি না।

নেইমার শেষে বলেন, আমি সত্যিই জানি না। হয়তো খেলতে পারি, আবার নাও পারি। আমাদের কোচ বদলে যাবে এই বিশ্বকাপের পর। আমি জানি না নতুন যিনি আসবেন, তিনি আমাকে পছন্দ করবেন কিনা! জাতীয় দলের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ইতিহাস। আশা করি শেষটা ভালো ভাবেই করব।

২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বেশি দূরে নয়। তিনটি বিশ্বকাপ খেলেও তাই শিরোপা অনেক দূরের বাতিঘর হয়ে রইল ৩০ বছর বয়সী নেইমারের জন্য। আরেকটি বিশ্বকাপ আসতে আসতে নেইমারের বয়স হবে ৩৪। বিশ্বকাপটা তার ছোঁয়া হবে কি? সবারতো প্রতিপক্ষ থাকে। তার প্রতিপক্ষের নাম ছিল ‘বয়স’!

একটা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন তো তার সেই কতদিনের। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর থেকেই দেশের মানুষদের প্রত্যাশার চাপ তার কাঁধে। টানা তিনটি বিশ্বকাপে দলের প্রাণভোমরা ছিলেন তিনিই।

সেই নেইমার যখন মাঠ ছাড়লেন এ কারণেই হয়তো কেঁদে মাঠ ছাড়লেন। তাই হয়তো থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে -আবার হয়তো ভক্তদের মুখফুটে বেরিয়ে এলো- ফিরে এসো, নেইমার! তোমার জন্য রোজ গলা ফাটাই।