আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখার সুফল

অনলাইন ডেস্ক:

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ৫ জুলাই ২০২২ মঙ্গলবার

আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস ও তাঁর প্রতি সর্বদা সুধারণা পোষণ করা মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। কারণ আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সুধারণা পোষণের মাধ্যমেই একজন মুমিন তার জীবনের সব ক্ষেত্রে স্থিরতা ও প্রশান্তি অনুভব করতে পারে। আল্লাহর রাসুল (সা.) মৃত্যুর আগে উম্মতকে উত্তম এই বৈশিষ্ট্য অর্জনের ব্যাপারে বিশেষ অসিয়ত করেছিলেন। সাহাবি জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২১)
অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে যেমন সর্বদা পাপ ও গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে, তেমনি আল্লাহর ওপর এই সুধারণাও রাখতে হবে যে তিনি অবশ্যই আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। নিম্নে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখার কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হলো—

ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি পায়

যার অন্তরে এ বিশ্বাস থাকে যে আল্লাহ তাআলা তার জীবনের সব বিষয়ের কল্যাণ নির্ধারিত করে রেখেছেন, তাহলে তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে, ইবাদতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। এমনকি যারা আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে, তাঁকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। পক্ষান্তরে যে আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তার ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে। কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের পালনকর্তা সম্বন্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদের ধ্বংস করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছ। ’ (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ২২-২৩)

ইবাদতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়

মুমিন যখন অন্তরে এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করবে যে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করলে তিনি যথাযথ প্রতিদান দান করবেন, তখন তার অন্তরে অধিক ইবাদতের আগ্রহ তৈরি হবে। আর আল্লাহ তো বান্দার ধারণা অনুযায়ী ফায়সালা করে থাকেন। এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার মতো ব্যবহার করে থাকি। (বুখারি, হাদিস : ৭৫০৫)

মৃত্যু সুন্দর হয়

যে আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা রেখে জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত একনিষ্ঠভাবে আমল করতে থাকে সে পার্থিব সমৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুর সময় আল্লাহর অনুগ্রহ দেখতে পাবে। কারণ আল্লাহ বান্দার বিশ্বাস অনুযায়ী ফলাফল দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্য। ’ (সুরা : কিসাস, আয়াত : ৮৩)

অন্তর পরিশুদ্ধ ও প্রশান্ত হয়

আল্লাহর রহমতের আশাবাদী হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ইখলাস তথা কথায় ও কাজে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত রাখা। এ ক্ষেত্রে একটি অপরটির বিপরীত হওয়া যাবে না। কারণ একজন মুসলিমের ওপর আবশ্যক হলো তার প্রতিটি কথা ও কাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে। পাশাপাশি আল্লাহর রহমতের প্রতি সুধারণা পোষণ করবে। কারণ আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ মানুষকে সব ঘৃণ্য মানসিকতা থেকে দূরে রাখে এবং ভালো কাজে উৎসাহিত করে। আর এর মাধ্যমেই অন্তরে প্রশান্তি তৈরি হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’

(সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)

পার্থিব উপকরণ গ্রহণে আল্লাহর সন্তুষ্টি

হাসান বসরি (রহ.) বলেন, বান্দা আল্লাহর প্রতি সুধারণা রেখে ভালো কাজ করে আর পাপিষ্ঠরা মন্দ ধারণা পোষণ করে মন্দ আমল করে। অতঃপর তারা নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ফলাফল পায়। মুমিন অবশ্যই  আল্লাহর এই বাণীর প্রতি বিশ্বাস রাখে—‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি (আল্লাহ) সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। ’   (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৩০)

আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি তুষ্ট থাকা

আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা পোষণ করার অর্থ এই নয় যে জীবনে কোনো দিন দুঃখ-কষ্ট আসবে না; বরং সময়ে সময়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা অসুস্থতা, অভাব-অনটন, দুশ্চিন্তাসহ নানা কঠিন সময় পার করবে। তবে তাদের মন কখনো ভেঙে পড়বে না এবং আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হবে না। তারা এই বিশ্বাস রাখবে যে আল্লাহ কল্যাণের জন্যই এগুলো আমার তকদিরে রেখেছেন। এভাবেই মুসলিমরা আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের ওপর তুষ্ট থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ করো, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকর গুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমৃত্যু আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখার তাওফিক দান করুন।