আল্লাহর সুনিশ্চিত সাহায্য পেতে পড়বেন যে দোয়া

ধর্ম ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:২৬ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে ধরনা দেওয়ার বিকল্প নেই। যেভাবে দায়িত্ব পালনে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। যে দোয়া মহান আল্লাহ তাআলা কবুল করেছিলেন। আল্লাহর সুনিশ্চিত সাহায্য পেতে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সেই দোয়াটি কী?

নবুয়তের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর তা যথাযথভাবে পালনে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। যে দোয়াগুলো উম্মতে মুহাম্মাদির শিক্ষা ও অনুসরণ-অনুকরণের জন্য মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনে তুলে ধরেছেন। তাহলো-

رَبِّ اشۡرَحۡ لِیۡ صَدۡرِیۡ -  وَ یَسِّرۡ لِیۡۤ اَمۡرِیۡ -  وَ احۡلُلۡ عُقۡدَۃً مِّنۡ لِّسَانِیۡ یَفۡقَهُوۡا قَوۡلِیۡ -  وَ اجۡعَلۡ لِّیۡ وَزِیۡرًا مِّنۡ اَهۡلِیۡ هٰرُوۡنَ اَخِی  اشۡدُدۡ بِهٖۤ اَزۡرِیۡ  - وَ اَشۡرِکۡهُ فِیۡۤ اَمۡرِیۡ کَیۡ نُسَبِّحَکَ کَثِیۡرًا وَّ نَذۡکُرَکَ کَثِیۡرًا اِنَّکَ کُنۡتَ بِنَا بَصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বিশরাহলি সাদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহ্‌লুল উক্বদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু কাওলি, ওয়াঝআললি ওয়াযিরাম মিন আহলি হারুনা আখিশদুদ বিহি আযরি, ওয়াশরিকহু ফি আমরি কায় নুসাব্বিহাকা কাছিরা ওয়া নাজকুরাকা কাছিরা ইন্নকা কুংতা বিনা বাসিরা।’

অর্থ : ‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন আর আমার জন্য আমার কাজকে (দায়িত্ব) সহজ করে দিন; আর আমার জিহ্বার (কথা বলার) জড়তা দূর করে দিন যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে; আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন, আমার ভাই হারূনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন; এবং তাকে আমার কাজে শরিক করুন ‘যাতে আমরা বেশী করে আপনার তাসবীহ পাঠ করতে পারি এবং  অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি, নিশ্চয়ই আপনিই তো আমাদের সব কিছু দেখেন।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ২৫-৩৫)

আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের এ দোয়া কবুল করেছিলেন। ফেরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করার বিষয়টিও কোরআনের বর্ণনায় এভাবে তুলে ধরেছেন-

قَدْ أُوْتِيْتَ سُؤْلَكَ يَا مُوْسَى

‘হে মুসা! তুমি যা যা চেয়েছ, সবই তোমাকে দেওয়া হলো।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৩৬)

হজরত মুসা আলাইহিস সালামের দোয়ার উদ্দেশ্য ছিল এমন-

প্রথম দোয়া-  رَبِّ اشْرَحْ لِىْ صَدْرِى  : হে আমার পালনকর্তা! আমার বুক উন্মোচন করে দিন। অর্থাৎ নবুয়তের বিশাল দায়িত্ব বহনের উপযুক্ত জ্ঞান ও দূরদর্শিতার উপযোগী করে দিন এবং আমার হৃদয়কে এমন প্রশস্ত করে দিন, যাতে তা উম্মতের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে প্রাপ্ত অপবাদ ও দুঃখ-কষ্ট বহনে তা সক্ষম হয়।

দ্বিতীয় দোয়া- وَيَسِّرْلِىْ اَمْرِىْ : আমার কাজ (দায়িত্ব পালন) সহজ করে দিন। অর্থাৎ নবুয়তের কঠিন দায়িত্ব বহনের কাজ আমার জন্য সহজ করে দিন। কেননা আপনার অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষেই কোনো কাজ বা দায়িত্ব সহজ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। স্বীয় অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে মূসা (আঃ) বুঝতে পেরেছিলেন যে, ফেরাঊনের মত একজন দুর্ধর্ষ, যালেম ও রক্ত পিপাসু সম্রাটের নিকটে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করা মোটেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়, আল্লাহর একান্ত সাহায্য ব্যতীত।

তৃতীয় দোয়া- وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِىْ يَفْقَهُوْا قَوْلِىْ : আমার জিহ্বার (কথা বলার) জড়তা দূর করে দিন, যাতে লোকেরা (সহজে) আমার কথা বুঝতে পারে’। কেননা রেসালাত তথা দ্বীনের দাওয়াতের জন্য রাসুল ও দাঈদের স্পষ্টভাষী ও বিশুদ্ধভাষী হওয়া একান্ত আবশ্যক।

চতুর্থ দোয়া-  وَ اجۡعَلۡ لِّیۡ وَزِیۡرًا مِّنۡ اَهۡلِیۡ هٰرُوۡنَ اَخِی اشۡدُدۡ بِهٖۤ اَزۡرِیۡ   : আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন, (যেমন) আমার ভাই হারূনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন। দ্বীন ও ইসলামের দায়িত্ব পালনে উত্তম সাহায্যকারীর প্রার্থনা করাও জরুরি। যেমনটি রেসালাতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর ভাই হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে সাহায্যকারী হিসেবে চেয়েছিলেন।

পঞ্চম দোয়া- وَ اَشۡرِکۡهُ فِیۡۤ اَمۡرِیۡ کَیۡ نُسَبِّحَکَ کَثِیۡرًا وَّ نَذۡکُرَکَ کَثِیۡرًا اِنَّکَ کُنۡتَ بِنَا بَصِیۡرًا : এবং তাকে আমার কাজে শরিক করুন ‘যাতে আমরা বেশি করে আপনার তাসবিহ পাঠ করতে পারি এবং  অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি, নিশ্চয়ই আপনিই তো আমাদের সব কিছু দেখেন।’

ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে দ্বীন ও ইসলামের কাজে সহযোগিতা ও প্রেরণা পেতে একজন দাঈ’র উচিত, এভাবে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। যা করেছিলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম।

আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের একনিষ্ঠতা ও আবেদনগুলো সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছিলেন। আর এভাবে তাঁকে সুসংবাদ দিয়েছিলেন-

قَدْ أُوْتِيْتَ سُؤْلَكَ يَا مُوْسَى

‘হে মুসা! তুমি যা যা চেয়েছ, সবই তোমাকে দেওয়া হলো।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৩৬)

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সাহায্য প্রার্থনা দোয়াটি শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা পেতে কোরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য পেতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা জরুরি। এ দোয়ার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ ও সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার প্রতিটি কাজ দ্বীন ও ইসলামের কল্যাণে করার তাওফিক দিন। কোরআনে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন।