প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া স্বপ্নের ঘরে ৮০ পরিবারের অন্যরকম ঈদ

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:৩৪ এএম, ২২ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগ্রহীত

ছবি: সংগ্রহীত

সোমেশ্বরী নদী আমার ঘর লইয়া গ্যাছে, মাইনসের বাড়ি বাড়ি ছাপড়া তুইল্যাও ঘুমাইছি। শেষমেশ কৃষ্ণেরচর ইসকুলের বারিন্দাত রইছি। পরে উপজিলাত আবেদন করছি ঘরের লাগিন। জীবনে কোনোদিন ইটের দলান ঘরে থাকবাম, নিজের দলান ঘর অইবো এইডা ভাবজিনা। নয়া ঘরে ঈদ করতাছি, কি যে ভালা লাগতাছে গো বাজান। হেদিন এমপি সাইব ঘরগুলার খুঁজ নিয়া আমরারে ঈদে গুস্তু খাওনের ট্যাহা দিছইন, টেউনু (ইউএনও) সাইব আইয়্যা ঈদের বাজার দিছইন, আমরার আর কিতা লাগে? আমরার মাতার তাজ অইয়্যা থাকবাইন শেখ হাসিনা।

কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কৃষ্ণেরচরের বাসিন্দা বৃদ্ধা জোবেদা বেগম। তার মতো ওই এলাকার অনেকের জীবনের শেষ সম্বলটুকু চলে গেছে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙনে। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন কৃষ্ণেরচর স্কুলের বারান্দায়। সেখানেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোরকম দিন কেটেছে।

পুরোনো-ছেঁড়া কাপড় গায়ে জড়িয়েই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন কৃষ্ণেরচর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। তবু কোনো দুঃখ নেই তাদের। মুজিববর্ষ উপলক্ষে পাওয়া স্বপ্নের ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনের প্রথম ঈদ উদযাপন করেছেন। এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ।

বুধবার ঈদের দিন কৃষ্ণেরচর আবাসন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- নতুন পোশাক, সুস্বাদু খাবার না থাকলেও ঈদের আনন্দে কমতি নেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মাঝে। নিজের ঘরে ঈদ করতে পারাটাই যেন তাদের কাছে স্বপ্নের মতো।

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার- গৃহ হবে সবার’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দুর্গাপুর উপজেলায় সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য ৮০টি পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি করে সেমিপাকা ঘর উপহার দেওয়া হয়। এই ঘরে প্রথমবারের মতো ঈদ করতে পেরে উপকারভোগীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।

দিনমজুর আকবর হোসেন অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো চলতে পারেন না। পাঁচ বছর আগে দুর্ঘটনায় তার পায়ে সমস্যা হয়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের ভিটায় আশ্রিত ছিলেন। জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছেন অন্যের ভিটায়। অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য ছিল না তার।

তিনি বলেন, আগে ঝড় আসলে ভয় লাগত। টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে সারা শরীর ভিজে যেতো। এখন আর আমার কোনো ভয় নেই। সরকার পাকা ঘর দিয়ে আমার মতো গরিব মানুষের উপকার করেছে। আজ এই ঘরে সবাইকে নিয়ে ঈদ করতে পেরে আমরা খুব খুশি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই ধাপে এ উপজেলায় ৮০টি পরিবারকে খাস জমির ওপর একটি করে ঘর দেওয়া হয়েছে। আরো ৫০টি ঘরের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমি মনে করি, ঘরগুলো পেয়ে এ জনগোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদাসহ জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

দুর্গাপুরের ইউএনও মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি জায়গা নির্বাচন করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য একটি করে ঘর তৈরি করে দিতে পেরেছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করছি ঘর পেয়ে সুবিধাভোগীরা অনেক উপকৃত হবেন। দুর্গাপুর উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।