সত্য প্রকাশ করায় হেফাজত কর্মীদের সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৩:৪৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২১ বুধবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশ করার পর সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়েছে মৌলবাদী সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে নারীসঙ্গীসহ স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হন মামুনুল হক। সেই সংবাদ প্রকাশের জেরে হাবিবুর রহমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালিয়েছে জঙ্গিবাদী হেফাজতের নেতাকর্মীরা। হাবিবুর রহমান বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে হেফাজতের এমন বর্বর আচরণের লাগাম টেনে ধরতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকরা।

জানা গেছে, হাবিবুর চ্যানেল এস নামের একটি বাংলা টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। তিনি বলেন, গত শনিবার সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারীসঙ্গীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে অন্য গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। গত সোমবার রাতে উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের ভাটিরচর গ্রামের বাড়িতে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় একদল যুবক লাঠি হাতে নিয়ে মিছিল করে তার বাড়িতে প্রবেশ করে গালি শুরু করেন। তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলে তারা তাকে প্রশ্ন করেন, কেন মামুনুল হকের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে? এসময় হাবিবুর বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি ওই রিসোর্টে গিয়েছেন। একজন সাংবাদিকের কাজ সংবাদ প্রকাশ করা। এসময় মামুনুলের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে তাকে গালিগালাজ করেন। ভিডিও রেকর্ড করে হাবিবুরকে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে হেফাজতের কর্মীরা।

সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি ক্ষমা না চাওয়ার কারণে তারা আমাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন, আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে চলে যান।’ এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার তবিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় হাবিবুর রহমান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে।

সূত্র জানায়,ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মামুনুল হকের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলা করতে গিয়েও সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন হেফাজতের নেতারা। ওইদিন থানার ভেতরে ৭১ টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি বুলবুল আহম্মেদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলে হেফাজতের কর্মীরা। এর আগে ২৮ মার্চ হরতালের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজউদ্দীনের মাথা ফাটিয়ে দেয় সহিংস হেফাজতকর্মীরা। হরতালের দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় সৌরভ নামের এক সাংবাদিককে জোর করে কালেমা পড়িয়েছে হেফাজতের কর্মীরা।

দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের কর্মীরা হিন্দু মুসলমান পরিচয় জানতে সাংবাদিকদের জোর করে কালেমা পড়িয়েছে। আরেক জায়গায় কাপড় খুলে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সে হিন্দু নাকি মুসলমান। এগুলো ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী করেছে, আজকে এই কাজগুলো যারা করছে তারা হচ্ছে ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীকে বাংলাদেশে গণহত্যা করার জন্য যারা সহায়তা করেছিল সেই অপশক্তির পরবর্তী প্রজন্ম। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হেফাজতের হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এসব মধ্যযুগীয় আচরণ। হেফাজতকে এসব কাজ বাদ দিতে হবে। নয়ত দেশের মানুষের কাছে তারা পাক হানাদার বাহিনীর মতোই ঘৃণ্য হিসেবে পরিচিত হবে।