ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় প্রাসাদ

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৫:১৬ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে গভীরভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন এক প্রেমিক। ঠিক বিয়ের আগের দিন প্রেমিকা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ দুঃখ ও বেদনায় রহস্যময় এক প্রাসাদ তৈরি করেন প্রেমিক। যা আজও রহস্যে মোড়ানো।

প্রাসাদটির নির্মাণকৌশল কেউ জানেন না! এমনকি তার প্রাসাদের বিভিন্ন পাথর কীভাবে এসেছে, তা-ও কারো জানা নেই।

প্রত্যাখ্যাত হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন লাটভিয়ার এডওয়ার্ড লেডস্কালনিন। এরপর তিনি নির্মাণ করেন চুনাপাথরের বিশালাকার একটি প্রাসাদ। প্রেমিকা তাকে ফিরিয়ে দিলে লাটভিয়া থেকে এডওয়ার্ড চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।

সেখানেই তিনি তার প্রেমসৌধ তৈরি করেন। বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যাবৃত প্রাসাদের মধ্যে এটি অন্যতম। লাটভিয়ায় এডওয়ার্ডের জন্ম হয় ১৮৮৭ সালে। তাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল পাথরের প্রাসাদ তৈরির। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই তিনি নিজের প্রেমসৌধ তৈরি করেন।

এ প্রেমসৌধে ২৫ ফুট উঁচু জীবশ্ম পাথর আছে, যা ওজনে ৩০ টনেরও বেশি। এমনকি মিশরের গিজার গ্রেট পিরামিডে ব্যবহৃত পাথরের থেকেও ভারি এডওয়ার্ডের প্রাসাদে থাকা পাথরগুলো।

এ প্রেমসৌধে অবাক করার মতো অনেক কিছুই আছে, যার কোনো উত্তর খুঁজে পাবেন না। সূর্যঘড়ি থেকে শুরু করে পাথরের রকিং চেয়ার, এমনকি ৫০০ পাউন্ড ওজনের হার্ট শেপ টেবিলও আছে প্রাসাদে।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, প্রাসাদে আছে ৯ টনের একটি দরজা। যা হাতের স্পর্শেই ঘুরতে ঘুরতে খোলে। জানা যায়, এডওয়ার্ড তার প্রাসাদটি গোপনে নির্মাণ করেন। কাউকেই নির্মাণকৌশল সম্পর্কে এতটুকুও ধারণা দেননি। প্রাসাদটি তিনি রাতের অন্ধকারে তৈরি করেছিলেন।

এজন্য স্থানীয়দের ধারণা, এডওয়ার্ড হয়তো জাদুবিদ্যার বলে প্রেমসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। তাছাড়া এত বড় বড় পাথর দিয়ে দরজা, টেবিলসহ অন্যান্য জিনিস তৈরি সম্ভব নয়। এসব পাথর কোথা থেকে এসেছে, সে উত্তরও রহস্যে ঘেরা।

অন্যান্য প্রাসাদ থেকে এডওয়ার্ডের তৈরি প্রাসাদটি বিশ্ববাসীর মন কাড়ে তখন থেকেই। প্রাসাদকে ঘিরে আছে নানা কৌতূহল। প্রাসাদের চুনাপাথরের দেয়াল, ছাদ এবং আসবাবপত্র প্রয়োজন বিশেষে স্থানান্তরও করা যেত।

এডওয়ার্ড প্রাসাদটি নির্মাণের পর থেকে সব সময় আতঙ্কে থাকতেন, কেউ যদি তার নির্মাণকৌশল জেনে যান! পরে ফ্লোরিডা শহর থেকে আরও ১৬ কিলোমিটার উত্তরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাসাদটি। ৩ বছর লেগেছিল প্রাসাদ স্থানান্তর করতে।

জানা যায়, শেষ বয়সে এডওয়ার্ড পাথর কেটে ও বহন করেই জীবন কাটিয়েছেন। সে সময় প্রাসাদ তৈরির খরচ জোগাতে তিনি বিভিন্ন রকম পেশা গ্রহণ করেছিলেন।

ফ্লোরিডায় এসে এডওয়ার্ড জমি কিনেছিলেন রুবেন মোসারের কাছ থেকে। এরপর রহস্যময় এ প্রাসাদ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে এর নাম দেন ‘এডস প্লেস’।

শোনা যায়, ফ্লোরিডায় আসার সময় তিনি আক্রান্ত ছিলেন যক্ষ্মায়। সে সময় মোসারের স্ত্রী তার সেবা-যত্ন করেছিলেন। ১৯৫১ সালে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান এডওয়ার্ড। তার প্রাসাদের কোনো উইল ছিল না। ফলে পাথরের প্রাসাদসহ বাকি সম্পত্তির মালিক হন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের হ্যারি নামের এক ভাতিজা।

কিছু সূত্র দাবি করে, হ্যারির শারীরিক ও আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তাই তিনি ওই প্রাসাদ বিক্রি করে দেন। তবে শিকাগোর এক গয়না ব্যবসায়ী জুলিয়ান লেভিনের দাবি ছিল, তিনি ওই জমি কিনেছিলেন ফ্লোরিডার প্রশাসনের কাছ থেকে। তিনি জানতেনও না, ওখানে একটি প্রাসাদ আছে।

১৯৮১ সালে প্রাসাদটি একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেন লেভিন। এখনো সেই সংস্থার অধীনেই আছে প্রাসাদটি। মালিকানার মতো বদলেছে নামও।

এডস প্যালেস থেকে রক গেট, রক গেট পার্ক হয়ে এ স্থাপত্যের বর্তমান নাম কোরাল ক্যাসল। বর্তমানে এ রহস্যময় প্রাসাদ দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা।