‘বন্ধু দেশের সঙ্গে সম্পর্কে কেউ ফাটল ধরাতে পারবে না’: বঙ্গবন্ধু

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:২৫ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বন্ধু দেশের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য স্বার্থবাদী মহলের অশোভন চক্রান্ত সফল হবে না। ১৯৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যাপক গণসংযোগ সফরের এই দিনে রাজবাড়ী এবং চুয়াডাঙ্গায় দুটি বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো দিন শোষকগোষ্ঠীকে  মাথা তুলতে দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারী দমনে প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হবে।’ অন্য এক প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্ব বিবেক মরে না গেলে আটক বাঙালিরা দেশে ফিরে আসবেই।’ জনসভায় ভাষণ শেষে বঙ্গবন্ধু বিকালে ঢাকায় ফিরে আসেন। এর আগে সকালে হেলিকপ্টারযোগে তিনি চুয়াডাঙ্গা গিয়েছিলেন।

ভারতকে নিন্দা করা এখন ফ্যাশন

প্রধানমন্ত্রী ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। ভারত এবং অন্য বন্ধুদের নিন্দা করা কিছু লোকের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম দিকে ভারত যদি আশ্রয়, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের বন্দোবস্ত না করতো, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণ অসুবিধায় পড়তে হতো।’ অন্য বন্ধুদের প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের এবং স্বাধীনতার পরে আমাদের সাহায্য করার জন্য আমি রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশকে ধন্যবাদ জানাই। বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ফাটল ধরানোর জন্য স্বার্থবাদী মহল চক্রান্ত করে সফল হবে না। তথাকথিত যেসব নেতা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নিয়ে ভারত সরকারের খরচায় নিজেদের ভরণপোষণ করেছিলেন এবং তারা এখানে ফিরে আসার পরপরই ভারতকে গালাগালি করতে শুরু করেছেন।’ বঙ্গবন্ধু তাদের মনোভাবের নিন্দা করেন। তাদের অকৃতজ্ঞ না হওয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।

মুক্তিযোদ্ধাদের আরও বেশি সংখ্যায় চাকরি দেওয়া হবে

দেশ গঠনমূলক কাজ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু জনসভায় বলেন, ‘প্রায় সব রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এবং বন্দরগুলো এরইমধ্যে সাফ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য চার কোটি টাকার মূলধন নিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের আরও বেশি সংখ্যায় সরকারি চাকরিতে নেওয়া হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদদের মধ্যে মাথাপিছু দুই হাজার টাকা করে মোট সাত কোটি টাকা বণ্টন করা হয়েছে। কেউ যদি সেই টাকা না পেয়ে থাকে, তাহলে ব্যাপারটা বিবেচনা করা হবে।’

যুদ্ধোত্তরকালে কেউ অনাহারে মরেনি

বঙ্গবন্ধু জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলার মাটিতে কোনও যুদ্ধ ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে সময়ে ৫০ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি থানায় প্রত্যেকটি শহরে যুদ্ধ হয়েছে। সব সম্পদ দখলদার বাহিনী ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে। ব্যাংকে কোনও বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববাসীর ধারণা ছিল—স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ৫০ লাখ থেকে এক কোটি লোক মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু তাঁর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার দরুন এখন পর্যন্ত কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। সরকার গত বছর সোয়াশ’ কোটি টাকার খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জনগণকে আর কখনও শোষণ করতে দেওয়া হবে না

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সংবিধানে আমি জনগণকে অধিকার দিয়েছি। এখন থেকে জনগণ সংবিধান প্রদত্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। দেশের সম্পদ দেশের জনগণের মধ্যে বণ্টন করা হবে। এখন থেকে কোনও বিদেশি রাষ্ট্র আমাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে যেতে বা বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ করতে পারবে না। বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো দিন কোনও শাসকগোষ্ঠীকে মাথা ঘামাতে দেওয়া হবে না।’

দুষ্কৃতকারী ঠেকাতে প্রয়োজনে সৈন্য পাঠাবো

দুষ্কৃতকারী দমন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ৩০ লাখ লোক জান দিয়েছে। পাকবাহিনী দুই লাখ মা-বোনের শ্লীলতাহানি করেছে। এতকিছু সত্ত্বেও কিছু দুষ্কৃতকারীরা আজ বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের শান্তিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।’

যাদের কাছে বেআইনি অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য বঙ্গবন্ধু জনগণের কাছে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্যের জন্য আরও রক্ষীবাহিনী নিয়োগ করা হবে। আমি কাউকেই দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো না।’

প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় ভাষণদানকালে বলেন, তাঁর সরকার যেসব ব্যাংক-বিমা ও শিল্প কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত করেছে, সেগুলো দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সম্পত্তি।’ বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ২৫ বছর পাকিস্তানিরা বাঙালিদের শাসন করেছে। তারও আগে ২শ’ বছর ব্রিটেন শাসন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ অতীতে কখনও নিজের দেশের সম্পদ ভোগ করতে পারেনি। পাকিস্তানিরা লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে সবকিছু ধ্বংস করেও খুশি হতে পারেনি। তাই তারা এখনও তাদের দেশে নিরীহ বাংলাদেশিদের আটক করে রেখেছে। ভুট্টোর নিজের ঘর এখন জ্বলছে—এ কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর তাকে তার নিজের ঘর সামলানোর উপদেশ দেন। ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির পিতা জিন্দাবাদ’, প্রভৃতি স্লোগানের মাঝে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, আল্লাহর মেহেরবানিতে আটক বাঙালিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।