মুসলিম হত্যার ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় সিঙ্গাপুরে কিশোর আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৩:৪৪ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে চালানো হামলার আদলে মুসলিম হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে।

ক্রাইস্টচার্চের হত্যাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্টের মতো এই কিশোর ছুরি দিয়ে মুসলিমদের হত্যা করে তা সরাসরি সম্প্রচারের পরিকল্পনা করেছিল। সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের আওতায় তাকে আটক করা হয়। এই আইনে বিচার ছাড়াই আটক রাখার সুযোগ রয়েছে।

১৬ বছর বয়সী এই কিশোরের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাকে একজন প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই কিশোর ‘ইসলামের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ও সহিংসতার প্রতি আকর্ষণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে।’

সিঙ্গাপুরে এই প্রথম চরমপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হল। দেশটিতে সন্ত্রাসী ও সহিংস হামলার ঘটনা খুবই বিরল। চরমপন্থী এই কিশোর গত মাস থেকে আটক রয়েছে।

হামলার পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয় জানায়, এটি পুরোপুরি পরিষ্কার যে এই কিশোর ব্রেন্টন ট্যারেন্টের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ, ক্রাইস্টচার্চ হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে সে এই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। সে স্বীকার করেছে যে, ট্যারেন্টের হামলার সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিও তাকে উত্তেজিত করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ব্রেন্টন ট্যারেন্ট গুলি চালিয়ে ৫১ ব্যক্তিকে হত্যা করে। এ ঘটনায় ট্যারেন্টকে প্যারোলবিহীন আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এই ঘটনা ছিল সবচেয়ে বড় সহিংস হামলা।

সিঙ্গাপুরের আসসায়াফাহ ও ইউসুফ ইশাক মসজিদে হামলার পরিকল্পনা করেছিল সে। দু’টি মসজিদই সিঙ্গাপুরের উত্তরাঞ্চলে ও তার বাড়ির কাছে।

নিরাপত্তা বিভাগ জানায়, হামলার স্থল দুটিতে ড্রাইভ করে যাওয়ার জন্য সে বাবার ক্রেডিট কার্ড চুরি করেছিল। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তবে ‘এই কাজ করতে পারবে’ এ ব্যাপারে সে আত্মবিশ্বাসী ছিল।

এই কিশোরের আসল পরিকল্পনা ছিল ট্যারেন্টের মতোই রাইফেল ব্যবহার করা। কিন্তু সিঙ্গাপুরে আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে কঠোর আইন থাকায় অস্ত্র বহনে ঝামেলায় পড়তে পারে এমন চিন্তা করে সে বড় ছুরি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে। সে একাই এই হামলা চালাতে চেয়েছিল।

হামলা চালানোর আগে লিফলেট বিলি করার পরিকল্পনা করেছিল সে। এর মধ্যে একটি লিফলেট গত বছর ফ্রান্সের নিস শহরে হামলা সংক্রান্ত, আরেকটি ইসলামের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে লেখা। লিফলেটে সে আশা প্রকাশ করে যে, তার হামলাকে একটি ‘সমর্থনযোগ্য সহিংসতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হবে।

প্রশাসন জানায়, গত নভেম্বরে তারা একটি সূত্র পায় এবং ওই কিশোরকে দ্রুত গ্রেফতার করে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে স্বীকার করে, এই হামলার সম্ভাব্য দুটি ফলাফলের কথা সে চিন্তা করেছিল। একটি হল- সে হামলা চালানোর আগেই গ্রেফতার হয়ে যেতে পারে, অপরটি হল- সে হামলা চালাবে এবং তারপর পুলিশের দ্বারা নিহত হবে।

আইন ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী কে শানমুগাম বলেন, ‘সে (ওই কিশোর) সকল প্রস্তুতি নিয়েছিল। সে জানতো যে তার মৃত্যু হবে এবং মৃত্যুর জন্য সে প্রস্তুত ছিল।’

প্রশাসন জানায়, তাকে ‘ধর্মীয়, মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসনে’ পাঠানো হবে। সেখানে একজন খ্রিস্টান কাউন্সিলরও থাকবেন যিনি ওই কিশোরের উগ্রবাদী আদর্শ সংশোধনে সহযোগিতা করবেন।

সূত্রঃ বিবিসি