ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ২ ১৪৩১

লাইলাতুল কদর তালাশ করুন...

যে রাতের আমল ৮৩ বছর চার মাসের সমান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ১৬ মে ২০২০  

লাইলাতুল কদর‎‎ এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান।

এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। আর এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন,

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ

إِنَّآ أَنزَلۡنَـٰهُ فِى لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ
وَمَآ أَدۡرَٮٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ
لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٌ۬ مِّنۡ أَلۡفِ شَہۡرٍ۬
تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيہَا بِإِذۡنِ رَبِّہِم مِّن كُلِّ أَمۡرٍ۬

سَلَـٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ

বাংলা উচ্চারণ : ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি, ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি, লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর, তানাযযালুল মালাইকাতু ওয়াররূহ, ফিহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন, সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর।

> আমি একে (কোরআন) অবর্তীণ করেছি লাইলাতুল কদরে।

(হে রাসূল!) আপনি কি লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে জানেন?

> লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে এতে (এ রাতে) প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরিল আলাইহিস সালাম) অবর্তীণ হন।

> শান্তিময় সেই রাত; যা ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যহত থাকে। (সূরা : কদর ৯৭: ১-৫)।

এ রাতের ইবাদতের ব্যাপারে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) স্ত্রী-পরিবারসহ সারা জেগে থেকে ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করতেন। তিনি রমজানের শেষ দশকের ইবাদতের মতো এতো বেশি পরিশ্রম অন্য সময় করতেন না।

লাইলাতুল কদর তালাশ করুন। যদি লাইলাতুল কদর পেয়ে যান তবে সে রাতের আমল হবে টানা ৮৩ বছর ৪ মাসের সমান। কারণ এই রাত হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। ছোট ছোট কিছু আমল রমজানের এই শেষ দশকের প্রতি রাতে করতে পারেন।

(১) সূরা ইখলাস (কুলহু আল্লাহু আহাদ) বেশি বেশি বুঝে বুঝে পড়বেন। তিনবার পড়লে একবার পুরো কোরআন পড়ার সাওয়াব পাবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৫)।

(২) মসজিদে/ অন্য কোথাও নিজে সাধ্যের আলোকে প্রতি রাতে ২ টাকা হলেও দান করুন। যদি রাতটি লাইলাতুল কদর হয় তবে আপনি ৮৩ বছর টানা ২ টাকা দানের সাওয়াব পাবেন। মা-বোনেরা আপনার ভাই/স্বামী/ছেরের মাধ্যমে টাকা পৌঁছাতে পারেন।

(৩) কয়েক পৃষ্ঠা কোরআন তেলোয়াত করুন। রাতের বেলায় যে ১০০ আয়াত কোরআন পাঠ করবে তাকে সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সাওয়াব দেবেন। (সহিহুল জামে ৬৪৬৮)।

সূরা কদর থেকে সর্বশেষ সূরা নাস পর্যন্ত পড়তে পারেন। কম সময়ে অতি সহজে ১০০ আয়াত পূর্ন করতে পারবেন।

(৪) সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি বেশি বেশি পাঠ করবেন। কারণ এটি একবার পাঠ করা আল্লাহর রাস্তায় পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার চেয়েও উত্তম। (তাবরানি ফিল কাবির : ৭৭৯৫)।

(৫) বেশি বেশি দরুদ, ইস্তেগফার ও অন্যান্য জিকির করবেন।

(৬) মসজিদে ফরজ নামাজ পড়তে গেলে বাসা থেকে ওজু করে যাবেন। তাহলে পুরোপুরি একটি কবুলযোগ্য হজের সাওয়াব পাবেন। (মিশকাত ৭২৮)। মা-বোনেরা আপনার পরিচিত সবাইকে আমলটিতে উদ্বুদ্ধ করুন। ইনশাআল্লাহ! আপনি সমান সাওয়াব পাবেন।

(৭) আর বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের ছোট্ট এই দোয়াটি পড়বেন।

উম্মুল মুমিনিন হজরত হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কি (দোয়া) পড়বো?

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি পড়বে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউবুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআ’ফু আন্নি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! অবশ্যই তুমি ক্ষমাশীল, দয়াময়, তুমি ক্ষমা করাকে ভালোবাস। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ : হাদিস- ৩৮৫০ সহিহ, আহমাদ : হাদিস- ৬/১৮২, সহিহ-আলবানি, তিরমিযী : হাদিস-৩৫১৩)।

(৮) কিছু সময় পিতা-মাতার খেদমত করতে পারেন।

(৯) কয়েক রাকাত নফল সালাত আদায় করবেন। সেহরির পূর্বে অন্তত দুই রাকাত তাহাজ্জুদ পড়বেন।

(১০) সুন্দর করে দু’রাকাত সালাত পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন। তওবা করবেন।

রজাদানের এই শেষ দশ রাতের একটা মুহূর্তকেও অপচয় করবেন না। কারণ রাতটি যদি শবে কদর হয়ে যায় তবে আপনি অনেক সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন। আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়